November 21, 2024
খুলনায় চোখে-মুখে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

খুলনায় চোখে-মুখে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

খুলনায় চোখে-মুখে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

খুলনায় চোখে-মুখে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

মানুষ কত খারাপ হতে পারে খুলনার এই ঘটনা তার প্ৰমাণ। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জীব যেমন মানুষ তেমনিভাবে সর্বনিৎকৃষ্ট প্রাণীও মানুষ। আর এই মানুষই মানুষকে এভাবে নাজেহাল করতে পারে আর নিচে নামতে পারে।

খুলনার পাইকগাছায় রোববার রাতে এক গৃহবধূর চোখে-মুখে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। সোমবার ভোরে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গৃহবধূর ছেলে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই গৃহবধূর স্বামী কাঁচামালের ব্যবসা করেন। গতকাল রাতে তিনি বাসা থেকে বের হন। ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার জন্য বাইরে ছিল। গতকাল দুষ্কৃতীরা বাড়ির পাশের গাছে উঠে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। মহিলার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় তার চোখ ও মুখ আঠা দিয়ে লাগানো ছিল। তার হাত-পা বাঁধা ছিল। তাদের অভিযোগ, ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

বাড়ি থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়েছে বলে জানান ওই মহিলার ছেলে। মায়ের চিকিৎসার জন্য তারা এখন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ সুমন রায় জানান, আজ সকালে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বর্তমানে তার মুখ ও চোখ বাঁচাতে অস্ত্রোপচার চলছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান জানান, কী কারণে ও কারা ওই নারীকে ধর্ষণ করেছে তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনও মামলা হয়নি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই গৃহবধূর (৪৫) মতো কোনো রোগী তারা আর

কখনো  দেখেননি। মহিলার চোখ ও মুখের আঠা সরানো হয়েছে, তবে তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল এবং কথা বলতে অক্ষম। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ইউনিট-২ এর সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসক মোঃ কনক হোসেন  বলেন, তাকে হাসপাতালে আনা হলে রোগী পুরোপুরি অজ্ঞান ছিলেন না। তবে তিনি একটুখানি অজ্ঞান ছিলেন। চোখের পাতা এবং উভয় ঠোঁট শক্ত আঠা দিয়ে সংযুক্ত ছিল। রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড় ও ছোটখাটো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অপারেটিং রুমে নিয়ে যাওয়ার পর আঠা সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর রোগীকে চোখের ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাই চোখের ওয়ার্ড থেকে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রেফার করা হয়। তবে চোখে-মুখে এমন আঠা লাগানো রোগী তারা আগে কখনো দেখেনি।

আজ সকালে ওই নারীর ছেলে বলেন, গত সোমবার রাতে তার মার জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু সে কথা বলতে পারে না। ইশারা করে কিছু বলার জন্য। তার মায়ের শরীর এখনো অনেক দুর্বল।

গতকাল সকালে খুলনার পাইকগাছায় গৃহবধূর প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাত-পা বেঁধে এবং চোখে-মুখে শক্ত আঠা লাগিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা তার চোখ ও মুখ থেকে আঠা সরিয়ে দেন। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গৃহবধূর স্বামী বলেন, তার স্ত্রী কথা বলতে না পারায় আসলে কী হয়েছে তারা বুঝতে পারছেন না। এই মুহূর্তে তারা কাউকে সন্দেহও করতে পারে না। তার স্ত্রীর কানের দুল, গলার চেইনসহ বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার খোয়া গেছে। সবাই হাসপাতালে থাকায় বাড়ির কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছেন না। কান থেকে দুল টেনে টেনে দুটি কানের লতি কেটে দেওয়া হয়। সেখানেও সেলাই করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গৃহবধূর স্বামী আরও জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তিনি শনি ও বুধবার বাদে বাড়ির বাইরে থাকেন। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে।মেয়েটি বিবাহিত। ছেলে খুলনায় থেকে পড়াশোনা করে। গত রোববার ঘটনার রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন না।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ওসিসি সমন্বয়কারী সুমন রায় বলেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য ওই গৃহবধূকে গতকাল বিকেলে ওসিসিতে নেওয়া হয়েছে এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রোগী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাকে আবার সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকটি দল কাজ করছে। এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মামলা হিসেবে ধরা হবে। বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X