অনলাইন বিনিয়োগের ফাঁদ:কোটি কোটি টাকা লুট
কথায় আছে “অতিলোভে তাঁতী নষ্ট” বিশেষ করে গরীব দেশের মানুষগুলি অতি তাড়াতাড়ি মজার কথার ছলে এবং টাকার প্রলোভনে অতি তাড়াতাড়ি ফাঁদে পড়ে যায়।
অনলাইনে ৩০০ ডলার থেকে ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলেই প্রতিদিন আয় ৬ ডলার থেকে ২০০ ডলার। এ ছাড়াও এমএলএম পদ্ধতিতে রেফারেন্স বোনাস মিলবে ৩০ ডলার থেকে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত। । এমন উচ্চ মুনাফার প্রলোভনে পড়ে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন। ইউএস এগ্রিমেন্ট নামের স্বনামধন্য অনলাইন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে রাজশাহীতে অনেকেই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। টাকা ফেরত ও প্রতারকদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা।
রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় এমন একটি মামলার ভিত্তিতে চার সাইবার অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর পুলিশের (ডিবি) সাইবার ও বিশেষ অপরাধ বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৬), মোঃ ইমরান শেখ (২৮), মোঃ মাহবুবুর রহমান সাদিক (৩২) ও শাহনেওয়াজ শরীফ শামীম (৩৪)। ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি জানায়, হাই রেফারেন্স কমিশন ও তিন মাসে জামানত দ্বিগুণ করার জন্য অনেকেই এই চক্রের ফাঁদে পড়ে। বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রায় ৬-৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা।
ডিবি জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ইউএস কমিউনিটি ট্রেড ডটকম সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে তাদের বিনিয়োগ তহবিল সংগ্রহের বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা উচ্চ হারে লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের বিভিন্ন স্কিম প্যাকেজে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করে।
তাছাড়া, যদি একজন বিনিয়োগকারী অন্য কাউকে বিনিয়োগের জন্য পেতে পারেন তবে প্যাকেজের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন কমিশন দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে অসংখ্য বিনিয়োগ স্কিম প্যাকেজ রয়েছে। প্রতারকরা প্রায় ৬ মাস ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সির সাহায্যে সাধারণ মানুষকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে এবং তাদের মধ্যে ডলার জমা করতে সহায়তা করছে। জমাকৃত টাকা ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করা হয়। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা অনুযায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ।
সিলভার প্যাকেজে ৩০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে বলা হতো প্রতিদিন রিটার্ন পাবে ৬ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ৩০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০০ দিন। গোল্ড প্যাকেজে ৫০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন ১০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ৫০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০১ দিন। ডায়মন্ড প্যাকেজে ১০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন ২০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ১০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০২ দিন। প্লাটিনাম প্যাকেজে ২০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন ৪০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ২০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০৩ দিন। এক্সক্লুসিভ প্যাকেজে ৫০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন রিটার্ন ১০০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ১০০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে এবং এই প্যাকেজের মেয়াদ হবে ১০৪ দিন। আর ভিআইপি প্যাকেজে ১০০০০ ইউএস ডলার বিনিয়োগ করলে বলা হতো প্রতিদিন রিটার্ন ২০০ ইউএস ডলার ও রেফারেল কমিশন ১০০০ ইউএস ডলার পাওয়া যাবে। এই প্যাকেজের মেয়াদ ছিল ১০৫ দিন।
ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণার নতুন কৌশল হিসেবে নতুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হ্যাচারি প্রকল্পের কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে চক্রটি। এই টাকার বিপরীতে পঁচিশ মাসের মধ্যে দ্বিগুণ লাভসহ মাসে আট হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এটা ছিল তাদের প্রতারণার ফাঁদ।
মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (তদন্ত) হারুন অর রশিদ বলেছেন, এই চক্রটি উচ্চ মুনাফার লোভে আমেরিকান কোম্পানির ছদ্মবেশে এমএলএম স্কিমে বিনিয়োগের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা নির্ধারিত প্যাকেজের আওতায় ডলারের বিপরীতে অর্থ বিনিয়োগ করতেন। আর সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় এই বাটপার ডাকাত দলের সদস্যরা। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেফতারকৃতের মোবাইল ফোনে হ্যাচারি প্রজেক্ট নামে আরেকটি প্রকল্পের তথ্য পাওয়া গেছে। যার মাধ্যমে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে। আমরা গ্রেফতারকৃতদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছি। এই চক্রের সাথে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তথ্য দিয়ে গ্রেফতার করা হবে। কতজন প্রতারিত হয়েছেন তা জানার চেষ্টা করা হবে।