November 22, 2024
গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

গ্যাস সংকটে শিল্প-কারখানা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

দেশে চলমান গ্যাস সংকট নিয়ে হতাশ ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েক মাস ধরে শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংকট রয়েছে। সরবরাহের অভাবে বিভিন্ন কারখানা দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে। এতে উৎপাদনে ধস নেমেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্প উৎপাদন গভীর সংকটে পড়বে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কলকারখানা বন্ধ হলে বা বেতন না দিলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হবে। দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে। তাই গ্যাস সংকট নিরসনে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, গ্যাস একটি আমদানি নির্ভর জ্বালানি। বর্তমানে বৈশ্বিক পরিস্থিতিও ভালো নয়। যদিও তিনি একটি ঠুনকো অজুহাত দিয়ে  বলেন যে, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ ও হামলা লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল ব্যাহত করছে। বিকল্প রুটের কারণে দূরত্ব বাড়ায় জ্বালানি খরচ, জাহাজ ভাড়া ও আমদানি ব্যয় বাড়ছে। তার উপরে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির খরচও বাড়ছে। তবে তিনি বলেন  চলমান গ্যাস সঙ্কট মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে দেখা দিয়েছে।  ব্যবসায়ীদের চোখ মুখ অন্ধকার । তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাকে দীর্ঘায়িত করছে। পাকিস্তান ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা এ অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তাই সরকারকে সাবধানে চলতে হবে। শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি। ২৪ সাল সবে শুরু হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের জন্য যদি দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়, সেটা দীর্ঘ সময়। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এফএসআরইউ বা রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিটের সংস্কারের কারণে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে এবং এই সমস্যা সাময়িক। এফবিসিসিআই ইউনিটটি সংস্কার করে শিল্প কারখানায় দ্রুত গ্যাস সরবরাহ করতে চায়। ‘সাময়িক’ সংকট দূর করে শিল্পের চাকা সচল রাখবে। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত আমদানি ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা, শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রামে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সামগ্রিক অসুবিধার জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মীর আসলাম উদ্দিন বলেন, “দুটি কারণে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে হঠাৎ করে কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এ কারণে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। , শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম এলাকায় সাময়িকভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

“এছাড়া শীতের কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে গ্যাসের নিম্নচাপ বিরাজ করছে। মন্ত্রণালয় খুব দ্রুত বিষয়টি মেরামত করার জন্য কাজ করছে,” তিনি যোগ করেছেন।

বাসা বাড়ির গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অস্থায়ী অসুবিধার জন্য মন্ত্রণালয় আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। তবে সব সময় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারে না কর্তৃপক্ষ।

কনভার্টেড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “মহেশখালীতে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির ধারণক্ষমতা ৬০০  মিলিয়ন ঘনফুট। গত নভেম্বরে মেরামতের জন্য পাঠিয়েছে, এসে গেছে। ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি টার্মিনাল সংস্কারাধীন। টার্মিনাল মেরামত করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে টার্মিনালটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ”

ক্টোবরে বাংলাদেশে গ্যাস সংকট দেখা দেয়। এরপর থেকে আবাসিক খাতের গ্রাহকদের ভোগান্তি ছাড়াও রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুক্রবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন শীঘ্রই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সংকটে রয়েছে দুই হাজার পোশাক কারখানাঃ

গার্মেন্টস কারখানা মালিকরা বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় দুই হাজার কারখানা পুরো গতিতে চলছে না।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) মুখপাত্র শোভন ইসলাম শাওন শুক্রবার বেনারকে বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গ্যাস সরবরাহে ব্যাঘাতের কারণে নারায়ণগঞ্জের নেট কারখানাগুলোতে কোনো কাজ নেই। রং করার জন্য গ্যাস অপরিহার্য। শত শত কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বা নামমাত্র চলছে।”

তিনি বলেন, ঢাকায় ছোট ওভেন কারখানা বন্ধ রয়েছে। বড় কারখানাগুলো বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। আমাদের মতে, গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় অন্তত ১ হাজার ৮০০ কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই ক্ষতি সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X