২০২৩ বিদায়ী বছরে সড়কে প্রাণ হারিয়েছে ৭৯০২ জনঃ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব
২০২৩ সালে সারাদেশে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজার ৯০২ জন। আর আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৩৭২ জন। এ ছাড়া ৫২০টি রেল দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৪৮ টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এ তথ্য জানায়। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ২০২৩ সালের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, করোনার চেয়েও ভয়াবহ মহামারী বিবেচনায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার প্রকল্পে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গঠিত সড়ক নিরাপত্তা ইউনিটকে শক্তিশালী করা। সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে করা সকল সুপারিশ বাস্তবায়ন। জাতীয় সড়ক ও মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং-এর রোড সাইন, রোড মার্কিং এবং চিহ্নিতকরণ ও আলোকসজ্জা স্থাপন।
গণপরিবহন চালকদের আপ-টু-ডেট পেশাদার প্রশিক্ষণ এবং নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা। সড়ক পরিবহন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,
- ঢাকা বিভাগের পর ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা চট্টগ্রাম বিভাগে।
- ২০২৩ এ চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২০৫ জন নিহত ও ২ হাজার ২৯৪ জন আহত হন।
- খুলনা বিভাগে ৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত ও ১ হাজার ৭৮ জন আহত হয়েছেন।
- বরিশাল বিভাগে ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত ও ৯৯২ জন আহত হয়েছেন।
- ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ নিহত ও ৬৬৫ জন আহত হয়েছেন।
- সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত ও ৯২৬ জন আহত হয়েছেন।
- রংপুর বিভাগে ৫৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন।
- রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ জন নিহত ও ১ হাজার ১৬৮ জন আহত হয়েছেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট ৬ হাজার ৯২৯টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত এবং ১০ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে সড়ক পথে ৬ হাজার ২৬১টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত ও ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছেন। রেলপথে ৫০২টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত ও ১০৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
একই সময়ে ২ হাজার ৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৫২ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নিহতদের ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ও আহতদের ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। সড়কে দুর্ঘটনার শিকার ১ হাজার ৯৫০ জন চালক, ৯৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক ১৫৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২ জন শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৮ জন আইনজীবী, ১০ জন প্রকৌশলী ও ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৭৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন- যাদের মধ্যে ১৬ জন সেনা সদস্য, ৪০ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন র্যাব সদস্য, ৭ জন বিজিবি সদস্য, ৩ জন নৌবাহিনীর সদস্য, ৩ জন আনসার সদস্য, ২ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ১ জন এনএসআই সদস্য। এ ছাড়া রয়েছেন ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ জন সাংবাদিক, ৬৪৭ জন নারী, ৪৬৬ জন শিশু, ৪১৬ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ১ হাজার ৫২৬ জন চালক, ২৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮ জন প্রকৌশলী, ৭ জন আইনজীবী, ৭৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২২ জন চিকিৎসক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট দুর্ঘটনার ৫২.৮৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা, ২০.৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪.২৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১.৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.২৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৬৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়ক নির্মাণে ত্রুটি, অবাধ যানবাহন চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, মাদকের ব্যবহার, চাঁদাবাজি, ছোট গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গাড়ির নিবন্ধন, চালকদের ফিটনেস ও লাইসেন্সিং আধুনিকায়নসহ ২৩টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা আর্থিক সহায়তা তহবিলের আবেদনের সময়সীমা ৬ মাস নির্ধারণ করতে হবে দাবি তুলেন। দুর্ঘটনা রোধে ১৪টি পয়েন্ট সুপারিশ করা হয়েছে।