January 20, 2025
সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু আয়নের মৃত্যু: শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে তদন্তের নির্দেশ

সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু আয়নের মৃত্যু: শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে তদন্তের নির্দেশ

সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু আয়নের মৃত্যু: শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে তদন্তের নির্দেশ

সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু আয়নের মৃত্যু: শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে তদন্তের নির্দেশ

খতনার ক্ষেত্রে পরিবারের অনুমতি ছাড়া শিশুর পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ এবং শিশুর মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অভিযোগটি তদন্ত করে অবিলম্বে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ) নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।

কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘বাঁচানো গেল না সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে থাকা সেই আয়ানকে’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে

প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ন নামের একজন নার্সারি ছাত্রকে ৩১ ডিসেম্বর খতনার জন্য রাজধানীর বাড্ডায় মাদানী এভিনিউতে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খতনা সাধারণত স্থানীয় এনেস্থেশিয়ার অধীনে করা হয়। কিন্তু অভিযোগ ছিল, চিকিৎসকরা তাকে পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া দিয়েছেন। পুরো শরীরে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি নেয়নি। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি আয়ানের।

তার বাবা শামীম আহমেদ জানান, ৩১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে অ্যানেসথেসিয়া করা হয়। তাকে ওই অবস্থায় রেখে ঘণ্টাখানেক ক্লাসে নিতে যাওয়া হয় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের। শেষ পর্যন্ত স্পন্দন না পাওয়ায় ডাক্তাররা বারবার অয়নের বুকে চাপ দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে চারদিন পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনের কাগজপত্রসহ আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। সঙ্গে সঙ্গে কথা বলেন ইউনাইটেড হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকের সঙ্গে। শিশুটির ক্ষেত্রে তিনি ভুল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার ক্ষতি হলে পুরো দায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

রোববার (৭ জানুয়ারি) রাত ১১টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অয়নের বাবা শামীম আহমেদ মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকের অবহেলাকে দায়ী করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত তারা মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে অজুহাত তৈরি করে আসছিলেন। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। বাবা শামীম আহমেদ আরও জানান, ৩১ ডিসেম্বর খতনার পর থেকে শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। তারাও সঠিক তথ্য দেয়নি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, খতনার ক্ষেত্রে পরিবারের অনুমতি ছাড়াই শিশুটির পুরো শরীরে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ এবং এর ফলে শিশুর হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

কমিশন মনে করে, চিকিৎসার অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু বা অন্য কোনো ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে সুষ্ঠু তদন্ত করে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে অভিযোগটি তদন্ত করে অবিলম্বে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

অয়নের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি

রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডা ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নত খতনায় অজ্ঞান হয়ে পড়া অয়ন আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলার অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সোমবার (৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মইনুল আহসান।

তিনি জানান, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য ৩ সদস্যের মধ্যে ১ জন মুগদা হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ, আরেকজন মুগদা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকও এই কমিটিতে রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, কমিটিকে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত সোমবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর সাতারকুল বাড্ডা ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নত খতনা করাতে লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু অয়ন মারা যায়। টানা ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন আয়ান।

এর আগে ৫ জানুয়ারি অয়নের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, অয়ন আমার পরিবারের বড় ছেলে। তার ৬ মাসের ছোট্ট একটা বোন আছে। আয়ানের মা কান্নাকাটি করতে করতে নিজেও অসুস্থপ্রায়। ইউনাইটেডের এক ঘটনায় আমার পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে।

শিশু আয়ানের মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

এদিকে রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করাতে অচেতন হওয়া অয়ন আহমেদের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের মেডিকেল সার্টিফিকেট বাতিল এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এই রিটটি করেন।

রিটে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X