November 23, 2024
বাংলাদেশে ১৯ % মানুষের মানসিক সমস্যা আছে

বাংলাদেশে ১৯ % মানুষের মানসিক সমস্যা আছে

বাংলাদেশে ১৯ % মানুষের মানসিক সমস্যা আছে

বাংলাদেশে ১৯ % মানুষের মানসিক সমস্যা আছে

মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হলে আমাদের মন ও শরীরে প্রভাব পড়ে তাকে মানসিক সমস্যা বা মানসিক রোগ বলে। আর এই মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক রোগী।একজন ব্যক্তি তখনই মানসিকভাবে অসুস্থ হয় যখন তার স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ করে ব্যাপক পরিবর্তন আসে, যা তার জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে।অন্য কথায়, একজন ব্যক্তি তার স্বাভাবিক প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ শুরু করে যা তার ব্যক্তিত্বের সাথে মেলে না।

দেশে মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের মধ্যেও এই সমস্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা এর জন্য মূলত ইন্টারনেটকে দায়ী করছেন।

একটি সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৮ বছরের বেশি বয়সী ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের মানসিক সমস্যা রয়েছে। যা আগে ছিল ১৬.০৪ শতাংশ। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ষাটের বেশি। এবং ৭থেকে ১৭ বছর বয়সী অর্থাৎ শিশুদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার ১৭.৭ শতাংশ। আগে তা ছিল ১৮ শতাংশ।

২০৩০ সালের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিষণ্নতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।

৯১ শতাংশের বেশি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পান না। অন্যদিকে, পুরুষদের মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে আরও সংস্কার এবং নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এমনকি ২ শতাংশেরও কম অস্থির কিশোর-কিশোরী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরালোভাবে প্রচার করতে হবে। ।প্রতি বছরই   বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় দিবস। ১৯৯২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।কিন্তু এর এমন কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না এখনো ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক রোগের কারণে সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে, যার কারণে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছে। যাদের বেশির ভাগই চিকিৎসা পায়নি। অনেকে আত্মহত্যা না করে অন্য কাউকে হত্যার মতো অপরাধ করে। বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এর চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

আরেকটি গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে ইন্টারনেট মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেট কোনো না কোনোভাবে দৈনন্দিন কাজে জড়িত। কিন্তু ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায় যে ৭২.২  শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।

তাদের মধ্যে ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছেন, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুসারে, ২৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে যে ইন্টারনেট মানসিক সমস্যার জন্য ‘সম্পূর্ণভাবে দায়ী’ এবং ৫৯.৮  শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে যে এটি ‘কিছুটা দায়ী’। তবে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকে দায়ী করেননি। এছাড়া শিক্ষার বাইরে ইন্টারনেটের কারণে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনোযোগ হারাচ্ছে এবং ইন্টারনেট আসক্তির কারণে তাদের পড়াশোনা হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া পারিবারিক সম্পর্কের ঘাটতি, সামাজিক সম্পর্কের অনগ্রসরতা, ব্যক্তিজীবনে বিরূপ প্রভাব, ঘুম ও শারীরিক সমস্যাসহ আচরণগত পরিবর্তনও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অবসর সময় কাটানোর জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বিশ্বায়নের যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার না করলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু জরিপ অনুযায়ী তারা ইন্টারনেটকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। সমস্যা সমাধানে কিছু পরামর্শ দিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে- ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্কুল, কলেজে ‘ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম’ চালু করা, ইন্টারনেট রেসকিউ ক্যাম্প স্থাপনের মাধ্যমে আসক্তি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং, থেরাপি এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচি প্রদান করা, ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর না করে সরাসরি যোগাযোগকে উৎসাহিত করার প্রচারণা। সামাজিক এবং পারিবারিক যোগাযোগ। .

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার আসলেই এ বয়সের মানুষের উপকার করছেনা বরং  ক্ষতি ডেকে আনছে। হতাশা, বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক ব্যাধিগুলি অল্প বয়স্ক যুবকদের মধ্যে, বিশেষ করে ১৯-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে আগের চেয়ে বেশি। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলে মনে হয়।

মানসিক রোগের চিকিৎসা একজন রোগীর জন্য খুবই প্রয়োজন। এটা কাউন্সেলিং, ওষুধ, থেরাপি ইত্যাদি হতে পারে। দিন শেষে সবার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজন। কারণ মন ও শরীর মুদ্রার বিপরীত দিক, শরীর খারাপ হলে মন খারাপ আর মন খারাপ হলে শরীর ভালো থাকে না। তাই সবাই মানসিক রোগ চিনুন, জানুন এবং সুস্থ থাকুন।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X