২০২৩ সালে নির্যাতনের শিকার ২৯৩৭ নারী ও শিশু
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই হাজার ৯৩৭ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৬৩৯ জন। ২৫ জন কন্যাসহ ৩৪ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আর ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৪টি।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১৪৯ জন, এরমধ্যে ১০৩ জন কন্যাশিশু। উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ৯৩ জন, এরমধ্যে ৮৪ জন কন্যা। উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ৮ জন কন্যাসহ ৯ জন। বিভিন্ন কারণে ৮৭ জন কন্যাসহ ৪৯৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৯ জনকে। ৭৪ কন্যাসহ ২৬৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ১০২ কন্যাসহ ২৭৯ জন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে, এরমধ্যে ১০ কন্যাসহ ৩৮ জন আত্মহত্যার প্ররোচণার শিকার হয়েছে। এছাড়াও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ৩ কন্যাসহ ৬ জন।
মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ১৩ জন নারী ও কন্যা পাচারের শিকার হয়েছে। এসিডদগ্ধ হয়েছে ৮ জন। ৩৪ জন নারী ও কন্যাশিশু অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, এরমধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১২২ জন, এরমধ্যে ৫২ জনকে হত্যা করা হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ২৩১ জন, এরমধ্যে ৮৩ জন কন্যাশিশু। পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩২ জন। ১৮ কন্যাসহ ২৫ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এরমধ্যে ৮ জন গৃহকর্মীর হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং ৪ জন গৃহকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১ কন্যাসহ ১২ জন ফতোয়ার শিকার হয়েছে। পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২ কন্যাসহ ৮ জন। ১৭ কন্যাসহ ৪৪ জন সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি। বাল্যবিবাহের ঘটনা প্রতিরোধ করা হয়েছে ৫০টি। এছাড়া ৪৩ কন্যাসহ ১২২ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশের ১২ টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে মহিলা পরিষদ এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
শিশু যৌন নির্যাতন কি?
অপরাধীরা সাধারণত শিশু এবং তাঁর পিতামাতার মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্যহীনতার সুযোগ নেয়। কোন ধরনের আচরণকে শিশু যৌন নির্যাতন হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে সে সম্পর্কে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে শিশুদের প্রতি যে কোনও যৌন কার্যকলাপ বোঝায় , যার সম্পর্কে শিশুর কোনও বোঝা নেই, যে সে সম্মতি দিতে পারে না এবং যে কার্যকলাপের জন্য সে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত। সুতরাং যে কোনো যৌন আচরণ যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় হস্তক্ষেপ করলে তা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচিত হবে।
শিশু যৌন নির্যাতন অনেক ধরনের হতে পারে। শারীরিক নির্যাতনই শুধু যৌন নির্যাতন নয়। অপরাধী যদি তার গোপনাঙ্গ খুলে বা শিশুদের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে, বাজে কথা বলে বা বার্তা পাঠায় – এই কার্যকলাপগুলিকেও যৌন নির্যাতন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ৯০ % শিশু যৌন নির্যাতন তাদের কাছের লোকেরা দ্বারা সংঘটিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পুরুষ। সাধারণত, সম্পর্কের বয়স্করাই শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে যা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়। তারা ছোটো, তাই তাদেরকে কথা শুনতে বাধ্য করা যায়, কোনো সন্দেহ সৃষ্টি না করে সহজেইতাদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব। এই ধরনের অত্যাচার দীর্ঘদিন শুধু মানসিক যন্ত্রণাই দেয় না, শিশুর শারীরিকভাবেও ক্ষতি করে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
উল্লেখ্য,বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষণ, অপহরণসহ যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা প্রকাশিত হলেও অধিকাংশ লোকলজ্জার কারণে ধামাচাপা দেওয়া হয়। ২০০০সালে, সরকার এই ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন তৈরি করে। ২০১৩ সালে এই আইনটি আরও কঠোর করার জন্য সংশোধন করা হয়।
যেসব অপরাধ নারী ও শিশু নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত
বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সংশোধিত ২০১৩ অনুযায়ী যেসব অপরাধ এ আইনের অন্তর্ভুক্ত তা হলো- দহনকারী বা ক্ষয়কারী, নারী পাচার, শিশু পাচার, নারী ও শিশু অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু, নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌন নিপীড়ন, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ।