November 23, 2024
বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে

আনাচে-কানাচে গজে ওঠা ফার্মেসি এবং হসপিটালের হাতুড়ে ডাক্তাররাও এখন অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছেন । এর সঠিক তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণ না হলে অচিরেই অ্যান্টিবায়োটিকের  ভয়াবহতা বাংলাদেশে দেখা দেবে বলে আশা করছেন  আশংকা   প্রকাশ করছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ডাক্তার বৃন্দ।

অ্যান্টিবায়োটিক:

(অ্যান্টিবায়োটিক ( antibiotic) হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক ওষুধ যা অণুজীবের (বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া) বৃদ্ধিকে ধ্বংস করে বা বাধা দেয়। সাধারণভাবে, প্রতিটি অ্যান্টিবায়োটিক একটি একক প্রক্রিয়া দ্বারা অন্যান্য অণুজীবের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে। “অ্যান্টিবায়োটিক” সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়।)

প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক ১৯২৭ সালে লন্ডনের সেন্ট মেরি হাসপাতালে কর্মরত একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট আলেকজান্ডার ফ্লেমিং আবিষ্কার করেছিলেন।

১৯৪১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারীতে পেনিসিলিন প্রথম মানুষকে দেওয়া হয়েছিল। অক্সফোর্ডের একজন পুলিশ অফিসার স্ট্যাফিলোকক্কাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পেনিসিলিন প্রয়োগের ফলে তার অবস্থার নাটকীয় উন্নতি হয়। কিন্তু পাঁচ দিন পর, যখন পেনিসিলিয়ামের সরবরাহ শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি পুনরায় আক্রান্ত হন এবং মারা যান।

মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের ক্ষত চিকিত্সার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম পেনিসিলিনের প্রচুর চাহিদা বাড়ে । ব্রিটিশ এবং আমেরিকান বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, ফ্লেমিং এই  “জাদু ওষুধ” এর বিকাশের দিকে পরিচালিত করেছিল যা অগণিত জীবন বাঁচিয়েছিল। ১৯৪৫ সালে, ফ্লেমিং, আর্নেস্ট চেইন এবং ফ্লোর চিকিৎসায় তাদের অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন।

এবার আসা যাক বাংলাদেশের কথায়; 

বাংলাদেশে ব্যবহৃত প্রায় ৯০ শতাংশ প্রথম ও দ্বিতীয় সারির অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায় প্রধান রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অনুপযুক্ত ব্যবহার এর প্রথম এবং প্রধান কারণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৭২ হাজার ৬৭০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

সোমবার (১৮/১২/২০২৩) বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিলন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের চ্যালেঞ্জ ও কার্যকারিতা’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ ফজলে রাব্বি চৌধুরী। বিএসএমএমইউর প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদ, প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সৈয়দা আনোয়ার গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ বর্ণনা করেছেন অধ্যাপক ড. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে অন্তত ৭৫ শতাংশ সংক্রমণটাইফয়েড, ই-কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবশিয়েলা ও সিউডোমোনাস  ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। প্রায় ৯০ শতাংশ অ্যাক্সেস এবং ওয়াচ গ্রুপ অ্যান্টিবায়োটিক এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অকেজো হয়ে গেছে। এ ছাড়া আইসিইউ রোগীদের চিকিৎসায় যে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দেওয়া হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা খারাপ। একই সঙ্গে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগে যে জীবাণুগুলো শুধু আইসিইউতে পাওয়া যেত, সেগুলো এখন কমিউনিটিতে পাওয়া যাচ্ছে।

বিএসএমএমইউ ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ছাড়া রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। মানুষ এখন অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ মারা যায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে দেখা যাবে করোনার চেয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে বেশি রোগী মারা যাবে। ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, হাসপাতালে আগত রোগীরা আক্রান্ত হয়। অনেক সময় দেখা যায় সাধারণ মানুষও রোগী দেখতে হাসপাতালে গিয়ে রোগী হয়ে যায়। একে ক্রস ইনফেকশন বলে। এ কারণে হাসপাতালে গেলেও দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড প্যারা-ক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক আহমেদ আবু সালেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. চন্দন কুমার রায় বিএসএমএমইউতে রোগীর নমুনায় জীবাণু শনাক্তকরণ এবং জীবাণুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা পরীক্ষা এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলায় বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন।

চিন্তাভাবনাহীন এবং সহজেই অ্যান্টিবায়োটিকের  ব্যবহার; বাংলাদেশের এই বর্তমান অ্যান্টিবায়োটিকের  অচলাবস্থার প্রধান কারণ ।

আরও পড়ুন

ডেঙ্গু কি, কেন? সচেতনতা

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X