November 22, 2024
৭ বছর ধরে কমছেই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা: বিশ্বব্যাংক

৭ বছর ধরে কমছেই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা: বিশ্বব্যাংক

৭ বছর ধরে কমছেই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা: বিশ্বব্যাংক

৭ বছর ধরে কমছেই বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা: বিশ্বব্যাংক

দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অনুপাত সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির কারণে এমনটি হয়েছে। গত ১২ বছরে বিদেশী ঋণ যে হারে বেড়েছে সে হারে রিজার্ভ বাড়েনি। এছাড়া দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশের রিজার্ভ কমছেই কমছে । কিন্তু ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাতও কমেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট রিপোর্ট ২০২৩ ‘ বা ‘গ্লোবাল ডেট রিপোর্ট ২০২৩’ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, রিজার্ভের সাথে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত কম হওয়া মানে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা বেশি, খেলাপির কারণে আর্থিক ঝুঁকি কম। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাত কম থাকলে আর্থিক ঝুঁকি বাড়ে। ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাও কমে যায়। এসব কারণে গত ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমছে। এক বছর বাড়লেও তা স্থায়ী হয়নি।

কিন্তু তারপরও বিদেশি ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি দেশটি। দেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাতও ঝুঁকির মধ্যে নেই।

তবে এখনো দেশটি বৈদেশিক ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। জিডিপির তুলনায় ঋণের অনুপাতে দেশটিতে কোনো ঝুঁকিও নেই।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের রিজার্ভ ও ঋণের অনুপাত ছিল ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে এই অনুপাত আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশে, ২০১৪ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশে। একই কারণে ২০১৫ সালেও রিজার্ভ ও বৈদেশিক ঋণের অনুপাত বেড়ে ৭১ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৬ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশে। তারপর থেকে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে বেশি হারে। তবে সে তুলনায় রিজার্ভ বেড়েছে কম। যার  দরুন ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাত কমতেই থাকে। যে ধারা এখনো অব্যাহত আছে। ২০১৭ সালে ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাত কমে ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৫৬ দশমিক ১ শতাংশে। ২০১৯ সালে আরও কমে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০২০ সালে দেশের রিজার্ভ বেড়েছে, কিন্তু ঋণ তেমনটা বাড়েনি। এ কারণে আগের দুই বছরের তুলনায় এ অনুপাত আবার বেড়ে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২১ সালে রিজার্ভ বেড়ে রেকর্ড গড়লেও ঋণও বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। এ কারণে ওই বছরে রিজার্ভ ঋণের অনুপাত আবার কমে ৫০.৫ শতাংশে নেমে যায়। ২০২২ সালে তা আরও কমে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশে  নেমে যায়।

গত ১১ বছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই সময়ে ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাত কমেছে ৩২.১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমেছে ৪৮ শতাংশের বেশি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশের বর্তমান নিট রিজার্ভ ১ হাজার ৯১৭ কোটি ডলার। বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে। নিট রিজার্ভের হিসাবে ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাত ১৯.৩৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১২ সালে দেশের বৈদেশিক ঋণ ছিল ২ হাজার ৯১৬ কোটি ডলার। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭০১ কোটি ডলারে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ বেড়ে ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে সাম্প্রতিক ডলার সংকটের অন্যতম কারণ স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়া। দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করা সম্ভব হলেও স্বল্পমেয়াদী ঋণ তা নয়। এতে ডলারের ওপর চাপ বাড়ে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট জাতীয় আয়ের সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

উল্লেখ্য,

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রধান উৎস হচ্ছে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় ব্যাংক থেকে উদ্বৃত্ত ডলার ক্রয়। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ, বিনিয়োগ, অনুদান থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি রিজার্ভে যোগ করা হয়। এছাড়া জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর আয়ও সরাসরি রিজার্ভে যোগ হয়।

অন্যদিকে চাহিদা বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে। এ কারণেই গত দুই বছরে রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি কমেছে। তারপরও খাদ্য, জ্বালানি, রাসায়নিক সার আমদানিতে সরকারি খাতের বাধ্যবাধকতা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। এর বাইরে বিদেশি ঋণ ও চাঁদাও দেওয়া হয় রিজার্ভ থেকে। এ ছাড়া প্রতি দুই মাস অন্তর বাংলাদেশ ব্যাংক আকুর সদস্য দেশগুলোর আমদানি দায় পরিশোধ করে। তবে ব্যাংকগুলো এই আমানত নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করে, যা কোম্পানি একবারে পরিশোধ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X