November 4, 2024
পঞ্চগড়ে এজলাসেই বিচারককে জুতা ছুঁড়ে মারলেন এক মহিলা

পঞ্চগড়ে এজলাসেই বিচারককে জুতা ছুঁড়ে মারলেন এক মহিলা

পঞ্চগড়ে এজলাসেই বিচারককে জুতা ছুঁড়ে মারলেন এক মহিলা

পঞ্চগড়ে এজলাসেই বিচারককে জুতা ছুঁড়ে মারলেন এক মহিলা

পঞ্চগড়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করা হয়েছে। একটি হত্যা মামলায় ১৬ আসামির জামিন মঞ্জুর করায় আদালতের বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন বাদী। সেই বিচারক হলেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অলরাম কার্জি। মামলার বাদী মিনারা আক্তার তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারে। এ ঘটনায় মিনারাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে ইয়াকুব আলী (৮৩) নামে বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়। নিহতের মেয়ে মিনারা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। সদর থানায় তার ছোট ভাইসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল প্রধান আসামিসহ ১৬ আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারে বাদী মিনারা আক্তার। এ সময় বিচারকের নির্দেশে বাদী মিনারাকে তাৎক্ষণিক আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।

নিহতের বড় ছেলের স্ত্রী রওশনা আক্তার লিলিসহ বাদীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, এ ধরনের হত্যা মামলার আসামি কীভাবে কোনো আইনে জামিন পেতে পারেন? । আমরা বিচার চাই। আবার আমাদের মামলার বাদীকে পুলিশ আটক করেছে। তাকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আদালত ছাড়ব না।

জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু মোঃ ইউনুস আলী লেলিন বলেন, নিম্ন আদালতের রায় বাদীর পছন্দ না হলে তার উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাদী আজ বিচারপতি অলরাম কার্জির দিকে স্যান্ডেল ছুড়ে মারে। জুতা বিচারকের সামনের কাঁচে আঘাত করে নিচে পড়ে যায়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জামিনের বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে রয়েছে। বাদীদের হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বাদীর আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব জানান, কয়েকদিন আগে বাদীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আজ তাদের বাড়িতে কুলখানি আছে। এ অবস্থায় একটি হত্যা মামলার সব আসামিকে জামিন দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিচারকের এমন নির্দেশে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আদালত ত্যাগ করি।

আসামিদের আইনজীবী রাকিবুত তারেক জানান, আদালত আসামিদের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি আত্মসমর্পণ করেননি। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের বেশির ভাগই নারী। এ ছাড়া অভিযুক্তের বক্তব্য ছিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। মামলার জব্দ তালিকা ও সুরতহাল প্রতিবেদনের নথিতেও এ তথ্য নেই। তাই সার্বিক বিবেচনায় এই জামিন দেওয়া হয়েছে।

তবে  পঞ্চগড়ে বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপকারী তরুণীকে মুক্তি দিয়েছে আদালত। প্রায় ৭ ঘণ্টা আটক থাকার পর সোমবার (১১ ডিসেম্বর) একই আদালতের বিচারক মিনারা আক্তার নামের ওই তরুণীকে জামিনে মুক্তি দেন। পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক (কোর্ট পরিদর্শক) জামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে একই দিন দুপুরে পঞ্চগড়ের আমলী কোর্ট-১ এর বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন মিনারা আক্তার। একটি মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এমন কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর মিনারা আক্তারকে আদালতে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরে তার বিরুদ্ধে সিআর (অভিযোগ) মামলা দায়ের করা হয়। সন্ধ্যায় এক আইনজীবী নিজের জামিনে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করে তাকে মুক্তি দেন।

আইনজীবী মেজবা ওয়ানুল করিম বসুনিয়া জানান, ঘটনার পর তাজুল ইসলাম নামে এক কর্মচারী তার বিরুদ্ধে সিআর মামলা করেন। আদালত ৫ হাজার টাকার জামিন মুচলেকায় তাকে জামিন দেন।

বাবা হত্যার বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ ডিসেম্বর মিনারা আক্তার বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, তার বাবা ইয়াকুব আলীকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। সোমবার মামলার ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ জন জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের সবাইকে জামিন দেন।

এ ঘটনার বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল বারী বলেন, সকালে একটু অপ্রত্যাশিত ঘটনার কথা শুনেছি।জেলা ও দায়রা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছুটির কারণে  অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়াও  বার এসোসিয়েশনের সভাপতি  আদালতে আসেননি।এ কারণে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে কিছু বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, বারবার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার ক্ষোভে গত ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারককে জুতা ছুড়ে মারে এক আসামি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X