November 4, 2024
পাউরুটি-বনরুটি যেন রোগের স্তূপ

পাউরুটি-বনরুটি যেন রোগের স্তূপ

পাউরুটি-বনরুটি যেন রোগের স্তূপ

পাউরুটি-বনরুটি যেন রোগের স্তূপ

ব্যস্ত নগর জীবনে, অনেক পরিবার সকালের নাস্তা হিসেবে বেকারি পণ্য আহার হিসেবে ব্যবহার করে। অনেকেই বেকারির তৈরি রুটি, কেক, বান রুটি, পুডিংসহ নানা ধরনের খাবার খান। অনেকেই পাউরুটির সঙ্গে সামান্য জেলি মিশিয়ে নাস্তা সেরে নেন ।

তবে হ্যাঁ এখন যান্ত্রিক সুবিধা থাকার কারণে গ্রাম-গঞ্জেও  বনরুটি   এবং পাউরুটির আধিক্য বেড়ে গেছে ।  এবং বিশেষ করে চায়ের দোকানে বনরুটির তুলনাই হয় না । অনেকে সকালবেলা অথবা ক্ষুধা পেলে অন্য বেলার নাস্তা ও  খাবারও সেরে নেন বনরুটি  এবং পাউরুটি দিয়ে।

বিশেষ করে প্রতিদিন সকাল থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লার দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির বেকারি পণ্য আসে। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বেশির ভাগ নগরবাসীর দিন এভাবেই শুরু হয়। হালকা নাস্তা হিসেবে অনেকেই ভরসা করেন বেকারি পণ্যের ওপর। কিন্তু এসব বেকারি পণ্য কতটা স্বাস্থ্যকর বা নিরাপদ তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ বেকারির পরিবেশ নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বেকারি কারখানাগুলো খাঁটি খাদ্য উৎপাদনের মানদণ্ডের ধারে কাছেও নেই। পণ্যের গুণগতমান রক্ষার কোনো যথাযথ ব্যবস্থা নেই। অনেক বেকারি পণ্য তৈরির তারিখ থাকে কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ বা মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ নেই।

দেশের প্রায় সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ রুটি বা বান রুটি খায়। কিন্তু এই খাবারগুলো কতটা নিরাপদ তা কেউ ভাবে না। তবে গবেষণায় এসব খাবারে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অনিরাপদ খাবার নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের (আইপিএইচ) ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে গবেষকরা  বাজার থেকে পাউরুটি এবং বন রুটির ২২৮টি নমুনা সংগ্রহ করেছিল৷ এই নমুনাগুলির মধ্যে বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলির পাশাপাশি নাম-স্বীকৃত সংস্থাগুলির পাউরুটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷ .

২২৮টি নমুনার মধ্যে ১১৬ টি পাউরুটি এবং ১১২ টি বনরুটি। পাউরুটিগুলোর মধ্যে ৯৮টি নামিদামি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুত ও বাজারজাত করা। বাকি ১৮টি নামসর্বস্ব বা নন-ব্র্যান্ডেড পাউরুটি। ১১২টি বনরুটির মধ্যে নামিদামি ব্র্যান্ডের ৬৪টি, বাকি ৪৮টি নন-ব্র্যান্ডেড প্রতিষ্ঠানের।

গবেষণায় সংগৃহীত নমুনায় লবণ, চিনি, আয়রন, সীসা, ক্যাডমিয়াম, পটাসিয়াম ব্রোমেট, মাইকোটক্সিন, আর্দ্রতা এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে যে এই নমুনাগুলিতে পটাসিয়াম ব্রোমেটের মতো ক্ষতিকারক পদার্থের পাশাপাশি ছত্রাক, মাইকোটক্সিন, অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ পাওয়া গেছে।

তন্মধ্যে, পটাসিয়াম ব্রোমেট রুটি, বান, কুকি, পেস্ট্রি, পিৎজা ব্রেড প্রভৃতি ফুলে ও চকচকে তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই উপাদান ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এই কারণে, জনস্বার্থে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সেন্টার ফর সায়েন্স ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে ২০ বছর আগে খাবারে পটাসিয়াম ব্রোমেট ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছিল। কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি সহ অনেক দেশে খাবারে এই উপাদানটির ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিএসটিআই সম্প্রতি বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত লবণ ও চিনি যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা সকলেই জানেন। বিশেষ করে অতিরিক্ত লবণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মাইকোটক্সিন প্রাকৃতিকভাবে নির্দিষ্ট ধরনের ছত্রাক থেকে বিষাক্ত পদার্থ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পটাশিয়াম ব্রোমেট ও মাইকোটক্সিনের উপস্থিতি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। রুটিতে অণুজীব এবং ছত্রাকের উপস্থিতি বিভিন্ন পেটের রোগের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি ও লবণ ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

রুটিতে কার্বোহাইড্রেটের প্রকারভেদ জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা সাধারণ শর্করার চেয়ে ভালো। কিন্তু জটিল শর্করার মধ্যে এর অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। রুটি অল্প সময়ের মধ্যে রক্তের গ্লুকোজ (এক ধরনের সাধারণ চিনি) বাড়ায়। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দেখলেই তা বোঝা যায়। এই মান যত বেশি, সেই শর্করাগুলি আমাদের জন্য তত বেশি ক্ষতিকারক। তুলনা করার জন্য, এই মানগুলি আপনার সামনে কিছু খাবারে রাখা হয়েছে – সাদা গমের পাউরুটি – ৭৫, রুটি – ৬২, চাপাতি- ৫২, ভাত- ৭৩, লাল চাল- ৬৮ ইত্যাদি। দেখা যাচ্ছে রুটি, চাপাতি এগুলো শর্করা হিসেবে বেশি ভাল। উচ্চ মাত্রার গ্লুকোজ আমাদের চোখ, কিডনি, অগ্ন্যাশয়ের জন্য খারাপ। তাই খেয়াল করলে দেখা যাবে ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে বনরুটির উপস্থিতি।

আমি বলব না যে বনরুটি খাওয়া যাবে না। এটা বলা উচিত যে বনরুটি অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। তবে নিয়মিত নরমাল রুটি আপনাকে ভালো রাখতে পারে।

আরেকটি কৌশল হল রুটি খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখা। মানে প্রচুর ফাইবার খাওয়া। যেমন সবুজ শাকসবজি খাওয়া যেতে পারে। এবং বেশিরভাগ শাকসবজিতে ফাইবার খুঁজে পেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X