ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে খসে পড়ল প্লাস্টার, ভাঙল দরজার গ্লাস
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের প্লাস্টার বিভিন্ন স্থান দিয়ে খসে খসে পড়ে যায়,হলের পাঠকক্ষের কাঁচের দরজা ভেঙে যায়। কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি না হলেও যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ৫.৬ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হয়।
৬০ বছরের পুরনো ঢাবির এই হলটি প্রায়ই ইট-সিমেন্টের প্লাস্টারে ভেঙে পড়ে। (যা হাজী মুহম্মদ মুহসীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী আবাসিক হলগুলির মধ্যে একটি। মুহসিন হলটি ১৯৬৭ সালে তৎকালীন বৃহত্তম আবাসিক হল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।) ছাদের ছাঁচের ভিতরের রডগুলিও এখন বেশ কয়েকটি জায়গায় বাইরে থেকে দৃশ্যমান। আগে সিলিংয়ে লাগানো ফ্যান হঠাৎ খুলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে হলে। ভবনের ছাদ থেকে প্লাস্টারের এসব বড় টুকরো পড়ে যাওয়ায় যেকোনো সময় শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, হলের বিভিন্ন কক্ষে প্রায়ই ওপর থেকে ইট-সুরকি খসে পড়ে। আজ ভূমিকম্পে বেশ কয়েকটি স্থানে এ ধরনের ফাটল, প্লাস্টার খুলে গেছে। এ ছাড়া রিডিং রুমের দরজার কাচও ভেঙে যায়।
জানতে চাইলে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, গত ভূমিকম্পে আমাদের হলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর আমরা বুয়েটের বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চিহ্নিত করে তাদের সুপারিশ অনুযায়ী হলটি সংস্কার করি। আমি আগামীকাল প্রকৌশল অফিসকে অবহিত করব এবং আজ ক্ষতিগ্রস্ত স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব। হল পুরনো হওয়ায় এসব হচ্ছে।’ এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাকে বা হল অফিসে জানাতে তিনি শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন,শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চাঁদপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। । রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৬।এর উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়।প্রতিবেশী নোয়াখালী জেলায় ভূমিকম্প বেশি অনুভূত হয়।
ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-উত্তর-দক্ষিণে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৫। এর গভীরতা ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপরদিকে, শিক্ষার্থীরা পাঠ কক্ষ থেকে হুড়োহুড়ি ছুটে এলে পাঠকক্ষের দরজা ভেঙে যায়। কাঁচ ভাঙার কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী সামান্য আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন কক্ষ থেকে হুড়োহুড়ি করে নিচে পড়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “আহত ছাত্রকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ছাত্রের গোড়ালিতে আঘাত লেগেছে।
হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেতালেব হোসেন বলেন, ঝাঁপিয়ে পড়া শিক্ষার্থী ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মিনহাজ। হলের ২৩৩ নম্বর কক্ষ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয় সে । তার পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, আর হাড় জোড়া না লাগলে ছোট অস্ত্রোপচার করতে হতে পারে।
উল্লেখ্য,
ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৭ মিনিটে কেঁপে ওঠে মিন্দানাও অঞ্চল।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৬। তবে ভূমিকম্পে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মার্কিন সুনামি সতর্কতা ব্যবস্থা ভূমিকম্পের পর মিন্দানাও দ্বীপে সুনামি সতর্কতা জারি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ ইউএসজিএস জানিয়েছে যে শনিবার ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২.৮ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি।
অন্যদিকে, ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (EMSC) বলছে, মিন্দানাও দ্বীপে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৫। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৩ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি।
এর আগে গত মাসে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৭ নভেম্বরের ভূমিকম্পে দেশটির সারাঙ্গানি, কোটাবাতো এবং দাভাও প্রদেশে কমপক্ষে ৮ জন নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। ওই ভূমিকম্পে দেশের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও অন্যান্য ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অফ ফায়ার’-এ অবস্থিত ফিলিপাইন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ রিং অফ ফায়ারকে বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরি সক্রিয় অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
আর এই ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম তালিকায় রয়েছে। এবং তার মধ্যে রয়েছে অপরিকল্পিত ভবনের নগরী রাজধানী ঢাকা।