এইডসের প্রবল উচ্চ ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
HIV-AIDS হল একটি ভাইরাস যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে দেয় । এইচআইভির সম্পূর্ণ রূপ হল- হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। অন্যদিকে AIDS এর পূর্ণরূপ হল- Acquired Immuno Deficiency Syndrome. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম থাকায় যে কোনো সময় রোগী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এইডস আক্রান্ত রোগীর শরীরে এইডস প্রবেশের পর এর লক্ষণ খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে তা আক্রান্ত ব্যক্তির সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, এইডস একজন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। যা তাকে টিউমার, যক্ষ্মাসহ এবং অন্যান্য রোগ সংক্রমণের প্রবণ করে তোলে।
এইচআইভি এইডসের প্রধান কারণ
- অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্ক।
- সংক্রামিত রক্তের সাথে সংযোগ।
- মা থেকে শিশুতে সংক্রমণ।
এইডস এইচআইভি দ্বারা সৃষ্ট একটি মারাত্মক রোগ। বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। এ দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও ঝুঁকি বেশি। ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে নিশ্চিত হওয়া মোট সংখ্যার একটি বড় অংশের জন্য রোহিঙ্গা জনসংখ্যা। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এইচআইভি সংক্রমণ রোধে দেশের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মারণ রোগ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে এবং নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাদের সঙ্গে এদেশের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের নানা যোগাযোগ রয়েছে। তাই জনগণ সচেতন না হলে এ ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে না।
আমাদের দেশে এইডস প্রকট নয়। তবুও, সতর্কতা গুরুত্বপূর্ণ। স্পট ভিত্তিক ট্রান্সমিশন বন্ধ করতে হবে। এটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এইচআইভি সম্পর্কে আরও তথ্য আনতে হবে। জনগণ কতটা সচেতন সে তথ্য দিতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, এইচআইভি সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশ একটি কম প্রকোপ ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। দেশে মোট ১৪ হাজার এইচআইভি সংক্রমিত (এইডস) রোগী রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নানা কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। দুই দেশের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত। উভয় দেশই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। ভারত ও মায়ানমার থেকে মানুষ বাংলাদেশে আসে। এ কারণে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্থলবন্দরে এইচআইভি স্ক্রিনিং পরীক্ষা চালু করা জরুরি। এই পরীক্ষাটি খুব বেশি খরচ হবে না, কিছু কিট দেওয়া হলে এটি ১০ মিনিটের মধ্যে করা যেতে পারে। জাতিসংঘের অনেক অর্থ অলস পড়ে আছে। আমরা এই অর্থ এইচআইভি স্ক্রীনিং পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত থেকে, সংক্রামিত মা থেকে শিশুতে এবং অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এখন সমাজ বদলে গেছে। এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এইডস সম্পর্কে অবগত নন। যাইহোক,৭১.৫ শতাংশ মহিলা এইডসের অন্তত একজন বাহক সম্পর্কে অবগত । ৩৬ শতাংশ মহিলা সমস্ত বাহক সম্পর্কে অবগত । ২০১৬ সালে এই হার ছিল ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ ক্যারিয়ার সম্পর্কে নারীদের মধ্যে সচেতনতার হার বেড়েছে ৭ শতাংশ। যদিও সরকার ৮-১০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল।
সরকারি সংস্থা বিবিএস মনে করে, সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির অভাবে নারীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল (এনএএসসি) প্রোগ্রাম অনুসারে, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৬৯ জনের এইচআইভি/এইডস পরীক্ষা করা হয়েছিল। গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দেশে এইচআইভিতে নতুন করে সংক্রমিত ৭২৯ জনের মধ্যে ৪২০ জন পুরুষ, ২১০ জন নারী এবং ১২ জন তৃতীয় লিঙ্গের। গত এক বছরে সাধারণ জনসংখ্যার ১৮৬ (২৬%) জন, ১৮৮ (২৬%) রোহিঙ্গা, ১৪৪ (২০%) প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্য, ৬১ (৮%) শিরায় মাদক সেবনকারী, নারী যৌনকর্মী ১৭ (২%), সমকামী ৬৭(9%), পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ (৭%) এবং ট্রান্সজেন্ডার ১৩ (২%)।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১৪ হাজারের বেশি এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে। ৮৪ শতাংশ চিকিৎসায় এসেছেন। ২০২০ সালে এই রোগে বাংলাদেশে ২০৫ জন মারা গেছে। এ পর্যন্ত মোট ১৫৮৮ জন মারা গেছে।
বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি এখনও জীবিত এবং সুস্থ। তিনি এইচআইভি চিকিৎসা কার্যক্রমের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা রোগী, অভিবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে ডেলিভারি সেবা নিতে আসা মায়েরা এবং রোহিঙ্গারা রয়েছেন। আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশই সাধারণ মানুষ।
স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এইচআইভি সংক্রমণ ঠেকাতে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আগতদের স্ক্রিনিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।