November 21, 2024
টিফিনের টাকা জমিয়ে রোবট বানালো সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আলামিন

টিফিনের টাকা জমিয়ে রোবট বানালো সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আলামিন

টিফিনের টাকা জমিয়ে রোবট বানালো সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আলামিন

টিফিনের টাকা জমিয়ে রোবট বানালো সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আলামিন

টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে  ‘”জিজ্ঞাসা যন্ত্র”  রোবট তৈরি করেছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আলামিন ইসলাম।রোবটের বুদ্ধিমত্তা দেখে বিস্মিত স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আলামিন দিনাজপুর সদর উপজেলার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। তার বাড়ি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার মুক্তিজোড়া পাড়ায়। নয় বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবাকে হারায় আলামিন। সে তার মা ও ছোট ভাইয়ের সাথে তার মামার বাড়িতে থাকে। সংসারে দারিদ্র্যের পরও হাল ছাড়েনি আলামিন। টিফিনের টাকা জমিয়ে রোবট বানাল এই মেধাবী।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলামিনের তৈরি রোবটের সঙ্গে কথা বলছে শিক্ষার্থীরা। একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে রোবট। সালামের উত্তর দিয়ে সালামও  দেওয়া হয়। রোবটটিও কম গতিতে চলছে। রোবটটি ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। তারপরে রোবটটি সুইচ অন করে আপনি যে প্রশ্নগুলি চান তার উত্তর দেয়। চলাচলের জন্য রয়েছে চারটি চাকা। রোবটটি বৈদ্যুতিক চার্জের মাধ্যমে চলে। আলামিন তার সবজান্তা রোবটের নাম দিয়েছেন ‘জিজ্ঞাসা যন্ত্র’।

জানতে চাইলে আলামিন ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরেই রোবট বানানোর পরিকল্পনা করছিলাম। টিফিনের জন্য দেওয়া টাকা বাঁচিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনতাম। কিন্তু রোবট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন প্রয়োজন ছিল  যা আমার কাছে ছিল না। একদিন ক্লাসে আমার রোবটের কথা বললে ম্যাডাম আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে বললেন। তারপর ম্যাডামের ফোনের সাহায্যে চালিয়ে  দেখলাম এটা ভাল কাজ করছে।  রোবটকে যে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন এটি উত্তর দিতে পারে।

আলামিনের সহপাঠী আফরিন জান্নাত নিশি বলেন, আলামিন প্রথম রোবট তৈরির কথা বললে আমরা ম্যাডামকে বিষয়টি জানাই। পরে একদিন সে তার রোবটটিকে স্কুলে নিয়ে আসে এবং ম্যাডামের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাহায্যে তা প্রদর্শন করে। রোবটটি আমাদের জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিচ্ছিল। আমরা কখনো ভাবিনি যে আমাদের সহপাঠী এমন রোবট তৈরি করতে পারে। আমরা এটা সম্পর্কে খুব  আনন্দ অনুভব করছি  এখন আমরা আলামিনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পরবো।

আরেক সহপাঠী রিফাত হোসেন জানান, আলামিন কাগজ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করত। এর আগেও সে একটি লাইট, একটি ফ্যান করেছে। পড়াশোনায়ও সে ভালো। এবং খেলাধুলাও ভাল, বিশেষ করে দাবা। আমরা সবাই তার জন্য খুব খুশি। সে আমাদের এবং আমাদের বিদ্যালয়ের গর্ব।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আফরিন আক্তার আশা জানান, তিনি আলামিনের তৈরি রোবটটি আমাদের ক্লাসে এনে দেখিয়েছেন। গুগলে সার্চ করলে আমরা যেমন প্রশ্নের উত্তর পাই, তেমনি এর রোবট দ্বারা আবিষ্কৃত রোবট থেকেও আমরা উত্তর পাই। এটি একটি খুব ভাল আবিষ্কার। আলামিন ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে এই আশা করি।

আলামিনের মা মরিয়ম আক্তার জানান, রাতে পড়ালেখা শেষ করে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতো সে । আমি জিজ্ঞেস করলে বলত কাজ শেষ হলে বলব। আমি টিফিন খাওয়ার জন্য যে টাকা দিতাম সেগুলো জমিয়ে সে রোবটের বিভিন্ন পার্টসগুলো কিনত।আমাকে বলত যে একটা স্মার্টফোন হলে তার কাজটা হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের অভাবের সংসার, এখনও আলামিনকে ফোন কিনে দিতে পারিনি। পরে সে স্কুলের আপার ফোন দিয়ে রোবট চালাত। আমার ছেলে এমন একটি রোবট তৈরি করেছে এটা একজন মা হিসেবে খুবই ভালো লাগছে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন  সে যেন ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারে।

আলামিনের ক্লাস শিক্ষিকা আজমিরা খাতুন জানান, ছেলেটি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরি করতে পছন্দ করে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে থাকাকালীন একটি লাইট সিস্টেম চার্জার ফ্যান আমাকে বানিয়ে দিয়েছিল। ছাত্র হিসেবেও সে খুবই মেধাবী। তাকে দেখে স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী এমন কিছু তৈরি করতে উৎসাহিত হবে । আমরাও গর্ববোধ করি যে আমাদের স্কুলের ছাত্র এমন একটি রোবট তৈরি করেছে।

কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান হাকিম বলেন, আলামিনের উদ্ভাবন অন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করবে। আমরা বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করেছি। প্রতিটি স্কুলে আইসিটির পাশাপাশি বিজ্ঞান ল্যাব এবং উন্নত অনুশীলন সুবিধা থাকতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে।

দিনাজপুর সদর উপজেলা বিজ্ঞান ক্লাবের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থী সবসময়ই থাকে। আলামিনের রোবট আবিষ্কারের জন্য উপজেলা বিজ্ঞান ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

আলামিনের রোবট আবিষ্কারের খবরে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম আলামিনকে উৎসাহ ও নগদ সহায়তা প্রদান করেন।

কথা হলে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আলামিনের রোবট উদ্ভাবনকে আমরা খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বর্তমানে, শিক্ষা ব্যবস্থায় আইসিটি পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার্থীদের সেখানে অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগাতে সক্ষম করে। ভালো কিছু করার সেই চেষ্টা আলামিনেরও আছে। আলামিনকে আমাদের উপজেলা বিজ্ঞান সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X