ইলিশ: স্বাদে যার তুলনা হয়না
ইলিশঃ
ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tenualosa ilisha) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ যা বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আসে। বাঙালিদের মধ্যে ইলিশ খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ত্রিপুরা এবং আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে ইলিশ খুবই জনপ্রিয় মাছ। ২০১৭ সালে, বাংলাদেশের ইলিশ মাছ একটি ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল।
ইলিশ আহরণ ও বিপণন বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকা থেকে মোহনা ও নদীতে প্রচুর পরিমাণে প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ এবং সামুদ্রিক ইলিশ ধরা পড়ে। অপেক্ষাকৃত অল্প সংখ্যক অপরিণত জাটকা ইলিশও নদী থেকে ধরা পড়ে।
এদেশের অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক খাতে খোলা পানির মাছের মধ্যে ইলিশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একক সর্বাধিক ধরা পড়া মাছ। বর্তমানে দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ ইলিশ।
ইলিশ (ইলিশ) স্বাদ, গন্ধে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হিসেবে পরিচিত ক্লুপিফর্মেস পরিবারের টেনুয়ালোসা গোত্রের সদস্য। এই মাছের শরীর খুবই চিকন ও মোটা। মাথার উপরের অংশটি পুরু চামড়া দিয়ে ঢাকা। ধাতব রূপালী রঙের শরীর সূক্ষ্মভাবে সাজানো মাঝারি আকারের আঁশ দিয়ে আবৃত। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬০ সেমি। একটি বড় ইলিশের ওজন প্রায় ২.৫ কিলোগ্রাম। স্ত্রী মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত পুরুষ ইলিশের চেয়ে আকারে বড় হয়। ইলিশ একটি দক্ষ সাঁতারু। এই মাছ ১-২ বছরের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়, Tenualosa। ইলিশা, T. toli এবং T. kelee। এর মধ্যে T. ilisha বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করা হয়।
ইলিশ সাধারণত সমুদ্র, মোহনা এবং নদীতে পাওয়া যায়। সমুদ্রে তারা পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভিয়েতনাম এবং চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। শাতিল আরবের নদী, ইরান ও ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস, পাকিস্তানের সিন্ধু, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম নদী, মিয়ানমারের ইরাবদি এবং পদ্মা, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলী নদীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় নদীতে ইলিশ রয়েছে।
ইলিশ বাঙালি সমাজে ‘মাছের রাজা’ হিসেবে সমাদৃত, স্বাদ, গন্ধ ও চেহারায় অন্যান্য মাছকে ছাড়িয়ে গেছে।
কেন ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছঃ
এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই জানা। বাঙালি সমাজে একটি প্রবাদ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। আর বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় মাছ হলো ইলিশ। নদীমাতৃক এই দেশে অসংখ্য নদী রয়েছে। নদীর আকার যেমন ভিন্ন হয়, তেমনি নদীর মাছের স্বাদও ভিন্ন হয়।
বর্ষাকালে ডিম পাড়ার সময় এরা নদীতে আসে। দীর্ঘ সময় ১২০০ কিলোমিটার সাঁতার কাটার পর তারা ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে আসে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের বিভিন্ন নদী তাদের ডিম পাড়ার প্রিয় স্থান। এছাড়া আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গঙ্গা ও রূপনারায়ণ নদীতেও ইলিশ পাওয়া যায়।
বাঙালি সমাজের ‘মাছের রাজা’ ইলিশ শুধু মানের দিক দিয়েই নয়, নদী ও সাগরের এই রাজা পুষ্টিগুণেও অন্যান্য মাছের চেয়ে এগিয়ে। ইলিশ মাছ রোগ প্রতিরোধেও সহায়ক।
ইলিশের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা অতুলনীয়। বর্ষায় ভাজা ইলিশ, ইলিশ ভর্তা, সর্ষে ইলিশ, ভাপানো ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, পান্তা ইলিশ, ইলিশের ডিম, বাঙালির রসনা ইলিশের ডিম ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। ইলিশ মাছ শুধু স্বাদেই অতুলনীয় নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে ২১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ২৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৩.৩৯ গ্রাম শর্করা, ২.২ গ্রাম খনিজ এবং ১৯.৪ গ্রাম চর্বি, ১৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ, লবণাক্ত খনিজ পদার্থ। এবং লিপিড। যা অন্যান্য মাছ ও মাংসের তুলনায় অনেক বেশি। ওয়ার্ল্ড ফিশ অনুসারে ওমেগা-৩ পুষ্টির দিক থেকে স্যামনের পরেই ইলিশ দ্বিতীয়। জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্যামন ও টুনার পরেই আমাদের ইলিশের অবস্থান।
চিকিৎসকদের মতে, ইলিশ মাছ হার্ট সুস্থ রাখে, রক্ত সঞ্চালন ও বাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, রাতের ঘাম রোধ করে, ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে, হাঁপানি প্রতিরোধ করে, বিষণ্নতা দূর করে, ত্বকের যত্নে, শিশুদের মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে ইলিশে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে, যা রক্তের কোলেস্টেরল এবং ইনসুলিনের মাত্রা কমায়, যার ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। তাই ইলিশের তেল হৃদরোগীদের জন্য উপকারী। ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট খুবই কম। স্বাদ, মাছের গন্ধসহ নানা গুণে ইলিশ মাছ পেয়েছে মাছের রাজার মর্যাদা। আর এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ।
পানি ছাড়া ইলিশ বাঁচতে পারে না জেনেও অন্য পক্ষ সময়মতো পানি আটকে পানি না দিলেও ইলিশ নিতে কিন্তু তারা ভুল করেন না। কারণ, পদ্মার ইলিশ ছাড়া ভারতীয়দের জামাই যষ্টি যেনো হয়ই না , সে জায়গায় আমরা হয়ে যাই অসহায় । আর অসহায় হয়ে করি কি জানেন ? তখন ইলিশ রপ্তানি করে আমরা প্রতিবেশীদের মন জয় করি। আর এভাবেই আমাদের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অন্যতম অনুঘটক হয়ে উঠেছে সাদা এই রুপালি ইলিশ।
2 Comments