January 18, 2025
শুঁটকি মাছঃ লোভনীয় স্বাদে অনন্য

শুঁটকি মাছঃ লোভনীয় স্বাদে অনন্য

শুঁটকি মাছঃ লোভনীয় স্বাদে অনন্য

শুঁটকি মাছঃ লোভনীয় স্বাদে অনন্য

খাদ্য সংরক্ষণের প্রাচীনতম পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি হল রোদে শুকানো শুঁটকি মাছ। মাছ যখন শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়, তখন আমরা তাকে শুঁটকি মাছ বলি। মাছকে রোদে শুকানোর সময় মাছের জলীয় অংশ শুকানো হয় যাতে অণুজীব বাড়তে না পারে এবং মাছকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

বাংলাদেশের কিছু উপকূলীয় অঞ্চল এবং অভ্যন্তরীণ নিচু এলাকায় যেখানে আধুনিক স্টোরেজ সুবিধা এবং সন্তোষজনক পরিবহন অবকাঠামোর অভাব রয়েছে সেখানেই মাছ শুকানো হয় এবং শুঁটকি মাছ বেশি হয় । এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো হলো কক্সবাজার,সুন্দরবনের দুবলারচর, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, রাঙ্গাবালী, সোনাদিয়া দ্বীপ, মহেশখালী, সুনামগঞ্জের ইব্রাহীমপুর, জামালগঞ্জের যশোমন্তপুর ইত্যাদি। মোহনা ও সাগরে স্থায়ীভাবে ব্যাগজালেই  শুঁটকি মাছ ধরা হয়।

শুঁটকি মাছের একটি স্বতন্ত্র গন্ধ এবং স্বাদ আছে। শুঁটকি মাছ খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করেন; যদিও আবার শুঁটকি মাছের গন্ধ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। তবে কারও কারও কাছে শুঁটকি মাছের  নানা রকম ভর্তা অত্যন্ত পছন্দনীয় আর অতুলনীয় লোভনীয় খাবার।

ভোজন বিলাসী  খাবারের মধ্যে, সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হল শুঁটকি মাছ। শুঁটকি মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হয় যেমন রূপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, গোজার, পুঁটি, কাঁচকি ইত্যাদি। এটি বেশ জনপ্রিয় শুঁটকি মাছ। এই মাছগুলোকে লবণাক্ত করে কাঁচা ও কড়া রোদে শুকানো হয়। তাই মাছের শরীরের পানি বা তরল অংশ শুকিয়ে যায়। ফলে এই মাছে কোনো ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। এই মাছ প্রচুর পরিমাণে সূর্যের আলোর রোদে শুকানো হয়। তাই এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে।

আমরা জানি শুঁটকি মাছ আমাদের শরীরের জন্য কতটা স্বাস্থ্যকর । তবে  শুঁটকি মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্কেও আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। শুঁটকি মাছ একটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য যখন এগুলো ভালো মানের তাজা মাছ শুকানো হয় এবং কোনো কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ ছাড়াই সংরক্ষণ করা হয়।

শুঁটকি মাছের পুষ্টিগুণঃ

শুঁটকি মাছে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। এতে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে সেলেনিয়াম, নিয়াসিন, ভিটামিন-বি১২, কোলেস্টেরল, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালরি ইত্যাদি সব গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় উপাদান। শুঁটকি মাছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এই প্রোটিনের অ্যামিনো অ্যাসিড উপাদান ডিমের প্রোটিনের সমতুল্য। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

শুটকি মাছের যে সকল উপকারগুলা চোখে পড়ার মতো তা হলঃ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:

শুঁটকি মাছে সোডিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্নায়ু এবং পেশী গঠন বজায় রাখে। এছাড়াও এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপের জন্য শরীরে পানির সঠিক ভারসাম্য অপরিহার্য। এছাড়াও, এই পটাসিয়াম স্নায়ুতন্ত্র, পেশী এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতায় সাহায্য করে।

শরীরের হাড়ের গঠন:

তাছাড়া শুঁটকি মাছে রয়েছে ফসফরাস। ফসফরাস শরীরের হাড়, দাঁত এমনকি DNA এবং RNA এর গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ভিটামিন B12 লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও উন্নত করে।

শরীরে শক্তি উৎপাদন:

শুঁটকি মাছে নিয়াসিন থাকে। এই নিয়াসিন শরীরকে খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মস্তিস্ক , পরিপাকতন্ত্র এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। এছাড়াও, এই খাবারে রয়েছে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

ক্যালরির চাহিদা পূরণ:

যারা পরিশ্রম করেন তারা এই মাছ খেতে পারেন। এটি শরীরের ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে এবং শরীরকে কাজ করার জন্য শক্তি জোগায়।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:

শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শুঁকি খুবই কার্যকরী। এটি শরীরের উপকারী কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। উপরন্তু, এটি একটি উচ্চ মানের আমিষজাতীয়, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা হার্টের জন্যও উপকারী। এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে কারণ এতে প্রচুর উপকারী , দরকারি কোলেস্টেরল থাকে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:

শুঁটকি মাছ খুবই উপকারী খাবার। এটি নিয়মিত খেলে যক্ষ্মা, সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, জ্বর ইত্যাদি রোগ সহজে হয় না। এটি অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়োডিন, আয়রন বেশি থাকায় এটি রক্ত বৃদ্ধি করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

গর্ভবতী মায়েদের শরীরের জন্য:

গর্ভাবস্থায় আয়রন, সোডিয়াম ইত্যাদি উপাদানের প্রয়োজনীয়তা। আর শুকনো মাছে এই সব উপাদান রয়েছে। এছাড়া আরও অনেক উপাদান রয়েছে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় মায়েরা এটি খেতে পারেন। আপনার উপকার হবে

হরমোনের সমস্যা দূর করতে:

অনেকেরই হরমোনের সমস্যা রয়েছে। হরমোনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শুঁটকি খেতে পারেন। এটি শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বিভিন্ন হরমোনের সমস্যা দূর করে।

ক্রমবর্ধমান শিশুদের শারীরিক গঠন:

এটি বাড়ন্ত শিশুদের শরীর গঠনেও সাহায্য করে। এছাড়া শারীরিক পরিশ্রমের পর শরীরে শক্তি জোগাতে এর অনেক উপকারিতা রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে অনৈতিকভাবে শুঁটকি মাছ সংরক্ষণে বিভিন্ন ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কেমিক্যাল শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই রান্নার আগে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে তারপর রান্না করা ভালো। এটি ক্ষতিকারক কেমিক্যাল এবং জীবাণুর কার্যকারিতা হ্রাস করে।

আরও পড়তে

স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে হচ্ছে

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X