November 22, 2024
গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবারো পোশাক শ্রমিক নিহত

গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবারো পোশাক শ্রমিক নিহত

গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবারো পোশাক শ্রমিক নিহত

গাজীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আবারো পোশাক শ্রমিক নিহত

পোশাক শ্রমিকের হাড়ভাঙা শ্রমে মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে , তাদেরকে পুলিশের গুলিতে মরতে হবে এর চেয়ে দুঃখ জনক আর ন্যক্কারজনক ঘটনা পৃথিবীর কোথাও হতে পারেনা ।  এবং এটা কোনমতেই মেনে নেওয়া যায় না ।  অবশ্যই সেটার জন্য পুলিশের দূষিত সদস্যদেরকে কঠিন জবাবদেহিতা এবং শাস্তির মুখোমুখি আনতে হবে । আজকের আঞ্জুয়ারা খাতুন সহ যে সকল পোশাক শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন তাদের  পক্ষে এবং  যাদের রক্তে-ঘামে এ দেশ সচল; সকল মানুষ  আজ তাদের পক্ষে সোচ্চার ।

বাংলাদেশের, শ্রমিকদের ঘামে অর্থনীতি চলছে। শ্রমঘন পোশাক শিল্প সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত, কিন্তু শ্রমিকরা কোনো মুনাফা পায় না, এমনকি ন্যায্য মজুরিও পায় না। জীবনের চাকা সচল রাখার জন্য তারা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে, তবুও তারা সচ্ছল নয়।

গত এক দশকে সব আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের গড় মজুরি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, আফ্রিকাসহ সমগ্র বিশ্বে সর্বনিম্ন। কিন্তু ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার হয় সর্বোচ্চ বা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

গাজীপুরের কোনাবাড়িতে একটি ছোট পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। জামাল ও আঞ্জু দম্পতি। চাইলেও দুই সন্তানকে কাছে রাখার সামর্থ্য তাদের ছিল না। ৮ বছরের ছেলে আরিফ ও ৭ বছরের মেয়ে জয়া খাতুন গ্রামে দাদা-দাদির সঙ্গে থাকেন। সেখানে একটি স্কুলে আরিফ তৃতীয় শ্রেণিতে এবং জয়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ২০ দিন আগে পূজার ছুটিতে দুই ভাই-বোন তাদের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছিল।ছোট্ট আরিফ ও জয়া এখন সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চরগিরিশ গ্রামে ফিরছেন  মা আঞ্জুয়ারার লাশ নিয়ে  ।

বুধবার সকালে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জারুন এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত হয়ে অঞ্জু আরা মারা যান। অঞ্জু আরার স্বামী মো. জামাল জানান, তার স্ত্রী শ্রমিক বিক্ষোভে ছিলেন না। বিক্ষোভের জেরে সকাল ৮টার দিকে কারখানা বন্ধ হয়ে জারুন এলাকায় সন্তানদের কাছে বাড়ি ফিরছিলেন অঞ্জু আরা। পথে কোনাবাড়ীর জারুন এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।

গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক নারী নিহত হয়েছেন। বুধবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

নিহত পোশাক শ্রমিকের নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩০)। সে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চর নটিপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের স্ত্রী। সে কোনাবাড়ীতে ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতো।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আশরাফ উদ্দিন আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আঞ্জুয়ারার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গাজীপুর শহরের কোনাবাড়ী, জারুনসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে বিক্ষোভ চলাকালে শ্রমিকরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন ভাংচুর ও আগুন দেয়।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। মঙ্গলবার মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন শ্রমিকরা। তাই আজ সকাল থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জারুন, বাইমেইলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছুড়ে মারে। পরে পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়।

পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ী পপুলার, কোনাবাড়ীর বিভিন্ন  ক্লিনিক ও গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে ন্যূনতম ২৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, সফিপুর ও মৌচাকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। পরে মজুরি বোর্ড ঘোষিত বেতন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কোনাবাড়ী এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস লিমিটেড, রিপন নিটওয়্যার লিমিটেড, ইসলাম গার্মেন্টস ও বেস্টল সোয়েটারের শ্রমিকরা কাজে উপস্থিত না হয়ে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। সকাল ৮টার দিকে কাশিমপুরের জারুন মোড়ের সামনে শত শত শ্রমিক জড়ো হয়ে  মিছিল শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রওশন মার্কেট হয়ে হাতিমারার দিকে অগ্রসর হয়।

সাভারের আশুলিয়ায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত এক সপ্তাহে শ্রমিকদের বিক্ষোভে ভাঙচুর হওয়া তিনটি কারখানার কর্তৃপক্ষ আশুলিয়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছে। এসব মামলায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অভিযান ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ)। আবদুল্লাহিল কাফি। তিনি বলেন, এর আগে শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে মামলা করেছে।

কোনাবাড়ী থানার ওসি আশরাফ উদ্দিন বলেন, “শ্রমিকরা আঞ্চলিক সড়কে আগুন দেয় এবং অবরোধ সৃষ্টি করে। ভাঙচুরের চেষ্টা করে। শ্রমিকদের মহাসড়কে নামতে দেওয়া হয়নি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।” বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

জবাবে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স সলিডারিটির প্রধান তাসলিমা আক্তার বলেন, আমরা এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করছি।

আমরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবি করে আসছি। শ্রমিকদের কোনোমতে বেঁচে থাকার জন্য এই মজুরি প্রয়োজন। মালিকরা বলছেন, তারা মজুরি বাড়াচ্ছেন ৫৬ শতাংশের মতো। কিন্তু বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে দেড়শ-২০০ শতাংশ পর্যন্ত। তাই বাজারদরের তুলনায় সাড়ে বারো হাজার টাকা বেতন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করি এবং এটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই। ঘোষিত মজুরি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ১০ নভেম্বর কর্মসূচি পালন করা হবে।

গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। মাছ-মাংস বাদ দিলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন পেঁয়াজ, আলু, ডিম ও সবজির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন বাস্তবতায় একজন শ্রমিকের সাড়ে বারো হাজার টাকা মজুরি দিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব। এই টাকা দিয়ে শ্রমিকের ক্যালরির ঘাটতি পূরণ হবে না।

আরও পড়ুন

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশঃ তিন শ্রমিক নিহত

শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দ্রুত আদায় করা ইসলামী দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X