ভৈরব ট্রেন দুর্ঘটনাঃ শনাক্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে মৃতদেহ
বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের পরিচিত ট্রেন ১১ সিন্দুর এর যাত্রীরা ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল ভৈরব রেলস্টেশনের কাছে রেল দুর্ঘটনায় জীবন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে। আর বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেল দুর্ঘটনার কারণই হল রেল পরিচালনায় অবহেলা , অযোগ্যতা , এবং জনবলের অলসতার ভয়াবহ পরিণতির ফল। তদন্ত এবং বিচার কোনটি ভালোভাবে না হওয়াও এসকল দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জড়ো হয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। মৃত ব্যক্তির শনাক্তকরণের সুবিধার্থে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি বড় পর্দায় মৃত ব্যক্তির ছবি প্রদর্শিত হয়। এরপর একে একে ১৫টি লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ পর্যন্ত ১৫টি লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুইজনের আঙুলের ছাপ মিলছে না। শনাক্তের পর জেলা প্রশাসন ও পুলিশের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তারা হলেন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের জিল্লুর রহমানের ছেলে হুমায়ুন কবির (৫৭), ভৈরবের প্রবুদ চন্দ্র শীলের ছেলে সবুজ চন্দ্র শীল (৫০), ভৈরব রাধানগরের আব্দুল মান্নানের ছেলে আফজাল হোসেন (২৪), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের শবত আলীর ছেলে মিজান উদ্দিন সরকার (৬৫), ভৈরবের মানিক মিয়ার ছেলে রাব্বি মিয়া (১৪), ময়মনসিংহ নান্দাইলের শিরু মিয়ার মেয়ে ফাতেমা বেগম (৩০), একই এলাকার সাইজ উদ্দিনের ছেলে সুজন মিয়া ও সুজন মিয়ার ছেলে ইসলামইল (০৮), সুজন মিয়ার ছেলে সজিব (১১), ঢাকার দক্ষিনখান এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে একেএম জালাল উদ্দিন আহমেদ (৩৬), কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে গোলাপ মিয়া (৩৪), মিঠামইন এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে সায়মন মিয়া (২৩), একই এলাকার হবিদ মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া (১৪), ময়মনসিংহ নান্দাইলের আরজু মিয়ার মেয়ে হোসনা আক্তার (২৩)।
এদিকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. ইমরান হোসেন জানান, আহত অবস্থায় ৭০ জনকে আনা হয়েছে। তাদের অনেককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে ভিড় করছেন আহত ও নিহতদের স্বজনরা। ভিড়ের কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। পুলিশ ভিড় কমানোর চেষ্টা করছে। তাই হতাহতদের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একটি বড় পর্দায় হতাহতদের ছবি প্রদর্শন করা হয়।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা এগারসিন্দুর গৌধুলী ট্রেনের সঙ্গে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়। মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। একই সময়ে যাত্রীবাহী ট্রেন এগার সিন্ধুর গোধুলি ভৈরব থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। মালবাহী ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটার পয়েন্ট ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ তিনটি বগিকে ধাক্কা দেয়। যাত্রীবাহী ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি উল্টে যায়। সিগন্যালিংয়ে কোনো জটিলতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্রসিং ত্রুটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় অন্তত ১৭ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আন্তনগর এগারোসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে ভৈরব স্টেশনের ৩ নম্বর লাইনে এসে থামে। এরপর ট্রেনের ইঞ্জিন সেখানে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ভৈরব স্টেশন ছেড়ে যায়। সিগন্যাল দেওয়া হয় ৩ নম্বর লাইন ক্রস করে ১ নম্বর লাইন দিয়ে ঢাকার দিকে যেতে। কয়েক মিনিটের মধ্যে পেছনের দুটি ছাড়া বাকি সব কোচ ক্রস পয়েন্ট পার হয়ে যায়। তখন ঢাকা থেকে মালবাহী ট্রেনটি ২ নম্বর লাইন দিয়ে আসছিল। মালবাহী ট্রেনটিও স্টেশনের ১ নম্বর লাইনে প্রবেশের সংকেত পেয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী ক্রস পয়েন্ট প্রস্তুত করা হয়েছিল। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের শেষ প্রান্তে দুটি বগি পার হওয়ার সময় মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন ক্রস পয়েন্টে প্রবেশ করে। তখনই এগারোসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিকে ধাক্কা মারে। পেছনের দুটি বগি লাইন থেকে পড়ে উল্টে যায়। বেশ কয়েকজন যাত্রী গাড়ি থেকে ছিটকে পড়েন। বগির ভেতরে যাত্রীরা একে অপরের উপরে চাপা পড়েন। দুর্ঘটনার পর ট্রেন দুটির চালক পালিয়ে যায়। স্টেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরাও পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন
চলন্ত ট্রেন থেকে মাথা বের করে প্রাণ গেল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রের