সরকার দোষীকে দোষী বলার ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে: টিআইবি
সরকার দোষীদের সাজা দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব পালনের মাঝপথে অপসারণ করা নদী রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হলেও জাতীয় নদী সুরক্ষা কমিশন কার্যকরভাবে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সরকার বলছে, ‘জনস্বার্থে’ নদী কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। আসলে ক্ষমতাবানদের স্বার্থ রক্ষা করা এখন জনস্বার্থ হিসেবে বিবেচিত হয় কিনা সে প্রশ্নও সামনে আসছে। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
এক বিবৃতিতে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নদী রক্ষা কমিশন শুধু সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। আবার (সরকারি) কমিশনের রিপোর্ট বা পরামর্শ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এ ভূখণ্ডের চরিত্র, দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করতে এই কমিশনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
নতুন সাবেক চেয়ারম্যানের সাহসী অবস্থানে দেশের মানুষ কিছুটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, নদী দখল, ধ্বংস ও দূষণ কারা করছে তা জানতে পেরেছি।
জনমত গড়ে উঠছিল। নদী রক্ষার আন্দোলন বেগ পেতে থাকে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান যখন অপরাধীদের সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করলেন, তখন তা আশাব্যঞ্জক। কমিশন চেয়ারম্যানের স্পষ্ট অভিযোগ সরকার আমলে নেবে বলে দেশবাসী আশা করেছিল। তদন্ত হবে, দোষীদের জবাবদিহি করা হবে। বাস্তবে তা নয়; বরং নড়তে হয়েছে কমিশন প্রধানকে।
কমিশনের চেয়ারম্যানের অপসারণের প্রভাব সুদূরপ্রসারী মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, (সরকার) শুধু নদী হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিচ্ছে না; বরং তাদের যেন বদনাম না হয়, কেউ যেন তাদের দিকে আঙুল না তোলে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মনজুর আহমেদ চৌধুরীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যারা নদী দখল, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও স্থাপনা নির্মাণ করে নদী হত্যা করছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তার পদ থেকে অপসারণ করে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর নদী দখল নিয়ে বক্তব্যের কারণে একাধিকবার আলোচনায় আসেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে তিনি সরাসরি নাম উল্লেখ না করে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সমালোচনা করেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব পালনের মাঝপথে অপসারণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি দাবি করেছে, এই পদক্ষেপ নদী রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
‘জনস্বার্থে’ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের নিয়োগ চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে টিআইবির প্রশ্ন- প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষা কি এখন জনস্বার্থে বিবেচিত? সরকারও কি দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে?
কমিশনের চেয়ারম্যানকে অপসারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও এই ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকার যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে তা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছে টিআইবি।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় নদী সুরক্ষা কমিশন বাংলাদেশের একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হলেও আইনের দ্বারা তা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কমিশন শুধু সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা যেন তাদের নেই। কমিশনের প্রতিবেদন বা পরামর্শ গ্রহণেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, এসবের মধ্যে সম্প্রতি নতুন সাবেক চেয়ারম্যানের সাহসী অবস্থানের কারণে দেশবাসী কিছুটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তিনি বলেন, নদী দখল, ধ্বংস ও দূষণ কারা করছে তা অন্তত আমরা জানতে পারতাম। জনমত গড়ে উঠছিল, নদী রক্ষার আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল।
ডাঃ জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান যখন অপরাধীদের সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে আরম্ভ করলেন , তখন আশাবাদী হতে হয়। কমিশন চেয়ারম্যানের সুস্পষ্ট অভিযোগ সরকার আমলে নেবে বলে দেশবাসীর মনে নতুন করে আশা জাগছিল। তদন্ত হবে, দোষীদের জবাবদিহি করা হবে। বাস্তবে তা নয়; বরং উল্টা নড়তে হয়েছে কমিশন প্রধানকেই । কমিশনের চেয়ারম্যানের নিয়োগ বাতিলের মধ্য দিয়ে সরকার দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষমতাও ঠেকাতে চাইছে এমন আশঙ্কা আরো জোরদার হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখলাম, ‘জনস্বার্থে’ তার চাকরির চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তাহলে কি এখন ক্ষমতাবানদের স্বার্থ রক্ষাকে ‘জনস্বার্থ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
এই বার্তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সারা বিশ্বের দেশে নদী এখন ‘জীব সত্তা’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। আমাদের হাইকোর্টের রায়েও এটা স্বীকৃত। কিন্তু আমরা উল্টো পথে হাঁটা থামাইনি। এখন আমরা শুধু নদী হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েই থেমে নেই; বরং তাদের যাতে বদনাম না হয়, কেউ যাতে তাদের দিকে আঙুল না তোলে সে ব্যবস্থা করছি।