নওগাঁয় ‘কাঠের মাইক্রো প্রাইভেটকার ‘ তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন শামসুদ্দিন
মাত্র ক্লাস থ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করা শামসুদ্দিন একজন দক্ষ কাশ্মীর মিস্ত্রি হয়ে তিনি কাঠ দিয়ে একটি মাইক্রো বা প্রাইভেট কার তৈরি করে ফেললেন । যেটা শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীবাসীর জন্য সম্ভাবনার এবং অত্যাশ্চর্যের একটি নমুনা । কারণ যেখানে একটি নরমাল প্রাইভেটকার মাইক্রো কিনতেও ৩০ লক্ষ টাকার উপরে গুনতে হয় । সে জায়গায় তার এই গাড়িতে খরচ হয়েছে শুধুমাত্র ৪৯ হাজার টাকা । তাই সম্ভাবনাময় এসকল প্রতিভাশীল বিজ্ঞানীদের কদর করতে জানলে; এবং মর্যাদার আসনে স্থান দিলে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সময় বেশি লাগবে না।
রাস্তায় বিভিন্ন গাড়ি দেখে তিনি ভাবতে লাগলেন কিভাবে কাঠের গাড়ি বানানো যায়। এরপর থেকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘরে বসেই ‘কাঠের মাইক্রো’ বানানোর চেষ্টা শুরু করেন তিনি। তাঁর ৬ মাসের প্রচেষ্টায় একটি চার চাকার ‘কাঠের মাইক্রো’ সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দর এই গাড়ি নিয়ে চলাফেরা শুরু করেছেন তিনি। এলাকায় সাড়া পড়ে গেছে। এর আগেও তিনি কাঠের তৈরি মোটরসাইকেল তৈরি করে সাড়া ফেলেছিলেন।
যার কথা বলছি তিনি হলেন কাঠমিস্ত্রি শামসুদ্দিনমন্ডল। ৫০ বছর বয়সী শামসুদ্দিন নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ি সরদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২৮ বছর ধরে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। পরিবারে আর্থিক স্থিতিশীলতা না থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণির বাইরে পড়াশোনার সুযোগ হয়নি তার।
শামসুদ্দিন এর তৈরি এই গাড়িটি অনেকটা ‘মাইক্রো’-এর মতো। গাড়ির পুরো বডি কাঠের তৈরি। পেছনে চালকসহ বসার জন্য দুটি আসন রয়েছে। পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী এই গাড়িটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। বর্তমানে গাড়িটিতে ১২০ MPR এর পুরানো ব্যাটারি রয়েছে। এক চার্জে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার চলে ।
শামসুদ্দিনের মতে, চারটি নতুন ব্যাটারি বসানো হলে এক চার্জে সারাদিন গাড়িটি চলতে পারে।নওগাঁর মান্ডে ৬ মাসের প্রচেষ্টায় কাঠের তৈরি চার চাকার ‘উডেন মাইক্রো’ তৈরি করেছেন। সুন্দর এই গাড়ি নিয়ে চলাফেরা শুরু করায় ইতিমধ্যে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন তিনি।
এর আগেও তিনি কাঠের তৈরি মোটরসাইকেল তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছিলেন। কাজের ফাঁকে বাসায় বসে কাঠের তৈরি ‘কাঠের মাইক্রো’ বানিয়ে নজর কেড়েছেন নওগাঁর শামসাদ্দিন মণ্ডল। সরকারি সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রসারণ করতে চান তিনি।
কাঠের তৈরি গাড়িটি অনেকটা ‘মাইক্রো’ মডেলের মতো। গাড়ির পুরো বডি কাঠের তৈরি। এটি বৈদ্যুতিক চার্জে চলে।
শামসুদ্দিন মন্ডল বলেন- রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল দেখে তিনি ভাবতেন কিভাবে নিজে গাড়ি বানাবেন। তারপর একদিন শখের বশে বাজার থেকে কাঠ কিনে আনেন। কাজের ফাঁকে গাড়ি বানানো শুরু করেন।
কাঠের গাড়ি প্রস্তুতকারক শামসুদ্দিন মণ্ডল বলেন, সড়কে বিভিন্ন যানবাহন চলতে দেখে নিজেই ভাবতাম কীভাবে গাড়ি তৈরি করা যায়। একদিন শখ করে বাজার থেকে কাঠ কিনে আনলাম। প্রথমত, আমি কাঠকে ভাঁজ করি যেভাবে ভাঁজ করা ভাল হয় । কাজ করতে করতেই গাড়ি বানানো শুরু করলাম। ৬ মাসের মধ্যে গাড়িটি বানানো শেষ হয় ।
৬ মাসের মধ্যে গাড়িটি তৈরী শেষ হয়েছিল। এ কাজে তাকে কেউ সাহায্য করেনি। গাড়ির চাকা ও এক্সেল ছাড়া সব জায়গায় কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। গাড়িটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা। কিন্তু এখনও কাজ বাকি আছে।
তিনি আরও বলেন- প্রথম দিন যখন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, তখন খুব ভালো লেগেছিল। প্রথম দিন থেকেই সবাই গাড়ি দেখতে ভিড় জমায়। অনেক সময় তাকে গাড়ি নিয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। সবাই প্রশংসাও করে তাঁর ।
গাড়ি দেখে আসার পর কেউ চলে যেতে চায় না। সবাই গাড়ি নিয়ে ছবি তোলে। সরকার সহযোগিতা করলে তিনি এর থেকে ভালো গাড়ি তৈরি করতে পারবেন। কারণ তার মাথায় এখন শুধু এমন চিন্তাই কাজ করছে।
এই পরিবেশবান্ধব ‘উডেন মাইক্রো’ পথচারীদের ব্যক্তিগত কাজে বের হলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এক ঝলক দেখার জন্য উৎসুক জনতা গাড়ির চারপাশে ভিড় করে।
আরও পড়ুন
‘বর্ডার সাইড অ্যানিমেল ডিটেক্টর’ আবিষ্কারে তিন ক্ষুদে শিক্ষার্থীর চমক!
কেউ কেউ মোবাইল ফোনে এই গাড়ির সঙ্গে নিজের ছবি তুলছেন। তারা জানান, কাঠের তৈরি এত সুন্দর গাড়ি তারা আগে দেখেননি। সবার মন্তব্য, এটা দেখতে খুব ভাল ছিল. তার প্রতিভা প্রশংসনীয়। এই গাড়িটি দেখতে খুব সুন্দর। দেখার মত।
একজন কাঠমিস্ত্রি হওয়ায় এত সুন্দর গাড়ি কীভাবে বানাবেন তা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। মাঝে মাঝে রাস্তায় গাড়ি দেখি। গাড়িটি পরিবেশবান্ধব। সরকারের সহযোগিতা পেলে তিনি ভবিষ্যতে আরও ভালো মানের গাড়ি তৈরি করতে পারবেন।
এদিকে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল বলেন, নিজের চেষ্টায় পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরি করায় তিনি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাকে সহায়তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশবান্ধব এই ‘উডেন মাইক্রো’ ব্যবহারে জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমার পাশাপাশি পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে আশাবাদী।
1 Comment