ড.ইউনূসের বিচার স্থগিত এবং সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৬০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড.মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের মার্চ মাসে রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্প ও শিক্ষা ক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র।
সেই খোলা চিঠির ধারাবাহিকতায় শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন চিঠিতে সই করেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্টা, সাবেক আইরিশ প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে একজন, ফলাফল এবং নাগরিক সাহসের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস একটি বিবৃতিতে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন।
চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’কে উদ্দেশ্য করে লেখা আছে: আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে নোবেল বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার জাতি যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।
যাইহোক, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি সাম্প্রতিক হুমকি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনের প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের জন্য যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- মামলায় নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূসেকে সম্প্রতি টার্গেট করা হয়েছে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি এটি ক্রমাগত বিচার বিভাগীয় হয়রানি। এই চিঠিটি তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ৪০ জন বিশ্বনেতা দ্বারা আপনার কাছে আগের আবেদনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করার একটি প্রচেষ্টা।
আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি আপনি অবিলম্বে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সহ আপনার দেশের মধ্যে থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল অভিযোগটি পর্যালোচনা করবে। আমরা নিশ্চিত যে তার বিরুদ্ধে যেকোন দুর্নীতি বিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন হবে।
আপনি জানেন, ‘কীভাবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে’ বিষয়ে প্রফেসর ড. ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তার একটি প্রধান উদাহরণ তিনি। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি যে তিনি নিপীড়ন বা হয়রানি থেকে মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন ।
চিঠির উপসংহারে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করি আপনি নিশ্চিত করবেন যে এই আইনি সমস্যাগুলি একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায্যভাবে সমাধান করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সকল মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করুন। সামনের দিনগুলিতে কীভাবে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা হয় সেদিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের সাথে যোগ দেব।”
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একদিনে ১৮টি মামলা শ্রমিকদের পাওনা টাকা একদিনে পরিশোধ না করায় নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত রোববার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন কর্মী বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা মামলাগুলো গ্রহণ করেন। ইউনূসকে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে বা জবাব দিতে নির্দেশ দেন। গতকাল আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. নুরুজ্জামান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত রোববার ডা. ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৮ জন শ্রমিক বাদী হয়ে গত রোববার সকালে ঢাকার শ্রম আদালতে মামলাটি করা হয়। ইউনূসের আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন না দেওয়ার অভিযোগে শ্রম আদালতে ১৮ জন শ্রমিক। ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা হয়েছে। ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সমনের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১৩ ধারা লঙ্ঘন করে মোট ২১ কোটি ৪১ লাখ ১৭ হাজার টাকা পরিশোধ না করায় বাদীরা এসব মামলা করেন। হাজার ১৬৩ টাকা। এসব মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের ১৭ সাবেক ও একজন বর্তমান কর্মী বাদী। কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা না করায় এসব মামলা করা হয়।
আরও জানতে
ড. ইউনূসের বিষয়ে ৪০ জন বিশ্বনেতার চিঠির প্রতি মার্কিন সমর্থন
এর আগে গত ২২ আগস্ট শ্রম আইন লঙ্ঘনের আরেকটি মামলায় ড.মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন । ওই দিন সাক্ষ্য দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। মামলার অন্য তিন আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও শাহজাহান। ইউনূসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাটি ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান।
আর এই ১৬০ জনের চিঠিতে ফুটে উঠেছে যে এভাবে তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি যুক্ত মামলা দেয়া হলে এটা একটি দেশের জন্য কল্যাণকর হয় না ।
1 Comment