ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের ইতিহাসে কখনো এত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি। গতকাল নতুন রোগী নিয়ে চলতি বছর হাসপাতালে যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৯ জন। এরই মধ্যে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ঢাকা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০ হাজার ১৭০ জন; ঢাকার বাইরে এ সংখ্যা ৫৪ হাজার ১৮৯ জন। এটি এক বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী। এর আগে ২০১৯ সালে দেশে ১ লাখ ১হাজার ৩৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বছরের চার মাস বাকি থাকতেই এবার সে সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল।অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যাও যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সাত হাজার ৮২৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৫৭০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ২৫৯ জন। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৬ জন, জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। আগস্টের ২২ দিনে ৫২ হাজার ৫২৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতি মাসের হিসাবে, জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৬ জন।
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে এ বছর শুধু রোগীর সংখ্যাই নয়, মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। জুন থেকে এই রোগে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে; সেই মাসে ৩৪জন মারা গিয়েছিল। জুলাই মাসে তা বেড়ে ২০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। ২১ আগস্ট এই সংখ্যাটি ছাড়িয়ে গেছে; এই মাসে ২৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ২ জন, মে মাসে ২ জন এবং জুনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছর এডিস মশা শনাক্ত করতে পরিচালিত জরিপে ঢাকায় মশার উপস্থিতি বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু ঢাকা নয় ঢাকার বাইরেও ব্যাপক হারে প্রকোপ বেড়েছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে আক্রান্ত এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। ২০২২ সালে, এডিস মশাবাহিত রোগের কারণে ৬২ হাজার ৩৮২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর আগে ২০১৯ সালে, দেশের ৬৪ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক লাখের বেশি লোক হাসপাতালে যাওয়ার রেকর্ড করেছিল। সরকারীভাবে, সেই বছর ১৭৯ জন মারা গিয়েছিল।
ডেঙ্গু মশার কামড়: ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা কামড়ালে সাধারণত সেই জায়গাটি সামান্য ফুলে যায় এবং চুলকায়। যাইহোক, অনেকের মধ্যে, মশার কামড়ে কোনও ফোলা বা চুলকানি হতে পারে না। কিন্তু রক্ত খাওয়ার জন্য মশা কখন কামড়ায় তা বেশিরভাগ মানুষই লক্ষ্য করেন না। কারণ মশা কামড়ানোর আগে মানুষের ত্বকে কিছু ব্যথা-নাশক তরল ছড়িয়ে দেয়। এতে ত্বকের ওই অংশ কিছুক্ষণের জন্য অবশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে, যখন অসাড়তা বন্ধ হয়ে যায়, ত্বকের অংশটি সামান্য চুলকায় এবং ফুলে যায়। কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের মতে, এডিস মশা কামড়ালে, ক্ষতটি মোটর গ্রানুলের সমান বা সামান্য ছোট অংশে ফুলে যেতে পারে।
তাই মশার কামড় এড়াতে হাত-পা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া দিন-রাত মশারি ব্যবহার, দরজা-জানালায় মশারি ব্যবহার করার পাশাপাশি মশা নিরোধক ক্রিম, স্প্রেব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যারোসল, কয়েল, ধূপ, ম্যাট, বাদুড়ও মশা তাড়াতে ব্যবহার করা হয়। একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়ায়। কিন্তু সম্প্রতি এডিস মশা তাদের চরিত্র পরিবর্তন করেছে। এখন এডিস ইজিপ্টি দিনে ও রাতে সব সময়েই কামড়াতে পারে, বিশেষ করে রাতে যদি ঘরে আলো থাকে।
ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা খালি চোখেই শনাক্ত করা যায়।.
মশাটি মাঝারি আকারের এবং এর শরীরে ও পায়ে কালো-সাদা ডোরা রয়েছে। কিন্তু আর্মিগিয়ার নামক একটি মশার পেটেও একই রকম ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। তবে এই মশা আকারে কিছুটা বড়। অনেকে এই মশাটিকে এডিস ইজিপ্টাই বলে ভুল করে। আপনাকে যে মশা কামড়াচ্ছে সেটি এডিস কিনা তা নিশ্চিত করতে আপনার মশার পায়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত। শুধুমাত্র এডিস মশার পা ডোরাকাটা। এ ছাড়া পুরুষ মশার অ্যান্টেনা বা প্রোবোসিস কিছুটা লোমযুক্ত। স্ত্রী মশার মধ্যে এটি নেই।
আরও পড়ুন
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে, দেশে রেকর্ড, আগস্টেই ৫০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি
ডেঙ্গু রোগীর করণীয় ও প্লাটিলেট কমতে শুরু হলে যা খাবেন
মশা কামড়ালে কি ডেঙ্গু জ্বর হবে? তবে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হতে পারে। সুস্থ এডিস মশা ডেঙ্গু রোগীর শরীর থেকে রক্ত পান করলে সেই মশা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এরপর আক্রান্ত মশা আবার কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। যেকোনো মশার মতো এডিস সাধারণত একাধিক ব্যক্তিকে কামড়ায়। তাই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশায় ভাইরাস ছড়ানোর পর সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মশা কামড়ালে তা রক্তে মিশে যায়। সেক্ষেত্রে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদ। কবিরুল বাশার।
তবে, যদি ভাইরাসটি শুধুমাত্র মশার কামড়ের পরে ত্বকে থাকে, তবে ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে ফেললে ভাইরাসটি মারা যাবে। কিন্তু ভাইরাস একবার রক্তের সঙ্গে মিশে গেলে আর কোনো কাজ হবে না।
1 Comment