ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে, দেশে রেকর্ড, আগস্টেই ৫০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি
দেশে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তকরণে রেকর্ড গড়েছে। এ বছর এ পর্যন্ত ১ লাখ ২ হাজার ১৯১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের আগের সর্বোচ্চ সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। এই বছর হাসপাতালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তখন এই রোগটি ঢাকা জ্বর নামে পরিচিত ছিল। তবে ২০০০ সাল থেকে এই রোগের প্রকোপ ও ভয়াবহতা বাড়তে থাকে।
একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৯ জন। গত ২১ দিনে ২৩৪ জন মারা গেছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃতের সংখ্যা ৪৮৫ জনে পৌঁছেছে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর পুরনো রেকর্ড ভেঙে ইতিমধ্যেই দেশে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১৯৭ জন রোগী। মোট ভর্তি রোগীদের মধ্যে রাজধানীতে ৪৯ হাজার ৩২৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫২ হাজার ৮৬৩ জন। ৪৮৫ জন মৃত ব্যক্তির মধ্যে ২৭৭ জন মহিলা এবং ২০৮জন পুরুষ। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ১২২ জন এবং রাজধানীতে মারা গেছেন ৩৬৩ জন।
আজ সারাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ১৯৭ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৭২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৩২৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ১৯৭ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬৮৬ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৬০৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪ হাজার ৭৯ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত এক লাখ ২ হাজার ১৯১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ৬৩ হাজার ৭৪৮ জন এবং নারী ৩৮ হাজার ৪৪৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৪ হাজার ২০ জন।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১১১ জন এবং এপ্রিলে ১৪৩ জন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ২ জন মারা যায়। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টের ২১ দিনে ৫০ হাজার ৩৫৯ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ২৩৪ জনের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় নেই।
উল্লেখ্য, দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ রোগী এবং মারা যান ১৬৪ জন। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও ২০২২ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ ছিল। সেই বছরে দেশে সর্বোচ্চ মারা যায় ২৮১ জন। তখন এটাই ছিল সর্বোচ্চ প্রাণহানি। আর চলতি বছরে দেশে গত ৩রা আগস্ট মৃত্যুর সেই রেকর্ড অতিক্রম করে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: শাহাদাত বলেন, গত এক সপ্তাহে নারীদের তুলনায় পুরুষদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। পুরুষদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর হার ৬২.৪ শতাংশ, মহিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৭.৬ শতাংশ। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আক্রান্তের দিক থেকে পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও ডেঙ্গুতে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি মারা যাচ্ছে। অর্থাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীদের যত্ন নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে কোনো ‘মহামারী’ একটি নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয় এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যে শেষ হয়। তবে এ বছর ডেঙ্গুর গন্তব্য কোথায় গিয়ে থামবে তা স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমন্বয়ের অভাবে এমনটি হয়েছে। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?। ঢাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে তার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সিটি করপোরেশন। কিন্তু এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খুবই হতাশাজনক। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মশা নির্মূল গবেষণা নিয়ে কাজ করাদের মধ্যে একজন মেডিক্যাল কীটতত্ত্ববিদও নেই।
অন্যদিকে দুই সিটি করপোরেশনের অবস্থাও একই। তারা শুধু লার্ভা প্রতিরোধে জরিমানা অভিযান চালাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া মহামারী থেকে নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বা ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
2 Comments