ফের ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি, নরসিংদীর ৯ যুবক নিখোঁজ
দলীয়করণে জর্জরিত বাংলাদেশের ভূমি । এখানে যা হয় সবই দলের স্বার্থে হয় । যেমন আপনার চাকরি, সরকারি আবাসন ,ব্যবসা-বাণিজ্য টেন্ডার এবং পদ পদবী সকল কিছুই দলের নিমিত্তে হয়। আর সেটা যদি সরকার দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে তো কথাই নেই । সেই ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ দলে দলে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে । আর অর্থাভাবে সেই যাত্রাই হয়ে যাচ্ছে ভাগ্যের লেপনে সলিল সমাধি। সেটা অহরহ ঘটেই যাচ্ছে।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। এর আগে গত ২৪ জুন সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নরসিংদীর বেলাব উপজেলা থেকে সাতজন ও রায়পুরা উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়।শুক্রবার (১১ আগস্ট) নিখোঁজ হওয়া ৯ যুবকের স্বজনরা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নিখোঁজরা হলেন- উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাসেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আব্দুল মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০) ।
নিখোঁজদের স্বজনরা জানায়, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে তারা দালালের স্থানীয় দুই সহযোগী দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন।
নিখোঁজ কামাল হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়ার দাবি, ৫-৬ মাস আগে তার ভাইকে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। ‘গাইমঘর’ (অবৈধ অভিবাসীদের ক্যাম্প) এ কিছুক্ষণ থাকার পর গত বুধবার রাত ৮টায় ইতালি যাওয়ার ৪০ মিনিট পর তাদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায়।
জাকিরের তত্ত্বাবধানে নৌকায় থাকা ২০ জনের মধ্যে কয়েকজন তীরে ফিরে গেলেও ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
লিবিয়ায় জাকির হুসেন এবং অন্যরা ফোন করে আমাদের জানান যে স্থানীয় মিলনের বেশ কয়েকজন সদস্য নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে আমার ভাইও আছে।
রবিউল নামে আরেক নিখোঁজ ব্যক্তির ভাই ইব্রাহিম দাবি করেন, ৮ মাস আগে তার ভাই ভৈরবের এজেন্টের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। কিন্তু সেখানে তার ভাইকে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেওয়া হয়নি।
পরে দুলালকান্দি এলাকার জাকির হোসেন আমাদের ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দিয়ে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন খবর পেলাম, আমার ভাই নিখোঁজ।
রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন, ‘আমি ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, সে আমাকে বলেছিল যে তারা গেম রুমে আছে এবং দোয়া চেয়েছে। তিনি আগামী বুধবার ডিঙ্গি দিয়ে যাবেন বলে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে যোগাযোগ করতে পারিনি।
দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণপুর ইউপি সদস্য মিলন মিয়া জানান, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মাধ্যমে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে লিবিয়ায় জাকির হোসেনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ফোনটি তাকে দেওয়া হলে অন্য কেউ তুলে নেয়। তিনি জানান, নৌকাডুবির সময় জাকির হোসেনের অধীনে থাকা ২০ জনের মধ্যে কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে দালাল জাকির হোসেন ও তার ফুফু শাহিনুরের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন।
আরও পড়ুন
ইতালির উপকূলে নৌকাডুবি: ১৩০০ অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যুর আশঙ্কা
রোমানিয়া সীমান্তে শতাধিক বাংলাদেশি আটক
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাব থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ বলেন, তিনি সাংবাদিক ও লোকজনের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছেন। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, আমি নিখোঁজদের বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
দেশের আইন কানুন যতটুকই আছে । সে নিয়ম-কানুনকে মেনে এবং বৈধ এজেন্টের মাধ্যমে বা সরকারি যোগাযোগের মাধ্যমে বিদেশ যাত্রার চেষ্টা করুন । অন্যথায় হিতে বিপরীতের সম্ভাবনাই বেশি । এবং ব্রেনে এই চিন্তা কখনোই রাখবেন না যে কম টাকায় বিদেশ গিয়ে কোটি কোটি টাকা বানিয়ে বাংলাদেশে এসে খুব কিছু করে ফেলবেন। এ সকল চিন্তা বাদ দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আইনের ভিত্তিতে চলুন । এবং সফলভাবে ইনকামের চেষ্টা করুন । বিদেশ যান আল্লাহ বরকত দিবেন ইনশাল্লাহ।