November 21, 2024
চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক

চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক

চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক

চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক

মাদক সেবন করলে চাকরি পাবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্সও পাবেন না।। উচ্চশিক্ষা পেলেও মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। কর্মচারীরা মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের জন্যও দুঃসংবাদ রয়েছে। ডোপ টেস্টে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া গেলে বরখাস্তের খড়গ নেমে আসবে। দেশে মাদকের বিস্তার রোধে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) খসড়া বিধিমালা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকারসহ সব প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে মাদকের বিস্তার ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। কয়েকদিন পর নতুন নতুন ওষুধ ঢুকছে। ধ্বংস হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। এর ফলে পারিবারিক কলহ, চুরি, ছিনতাই এমনকি খুনের মতো অপরাধও বাড়ছে। এ কারণে চাকরিসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মানবদেহের কিছু জৈবিক নমুনা যেমন প্রস্রাব, রক্ত, চুল, ঘাম, শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস, লালা বা মানবদেহের কোনো অঙ্গ বা অংশ বা শরীরের তরল ওষুধের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি যাচাই করা হবে। তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছরই মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে।

মাদকবিরোধী সংগঠন নারকোটিকস অ্যান্ড অ্যাডিকশন প্রিভেনশন অর্গানাইজেশনের (মানাস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ। সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। তবে ২০১৮ সালে দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে সরকারের পাঁচটি সংস্থা অভিযান চালিয়ে ২৫ ধরনের মাদকের মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, বিদেশি অ্যালকোহল, ৩ হাজার ১শ’ মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। ৩ কোটি টাকা। গত বছর শুধু দেশেই উদ্ধার হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। গত বছর 53 মিলিয়নেরও বেশি পিস উদ্ধার করা হয়েছিল। যদিও ২০০৯ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার।

ডিএনসির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে সারা দেশে ৪১ হাজার ৭৫৯টি মামলা হয়েছে। মাদকের আগ্রাসন ঠেকাতে এর আগে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দেয় সরকার।  সচিবালয়ে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হচ্ছে। আমি সবাইকে জানিয়েছি। এখন থেকে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক। এতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে জানুয়ারিতে প্রফেশনাল সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ডোপ টেস্ট এবং বিআরটিএ (BRTA) থেকে পুনরায় লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গত বছর ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন জমা দেওয়া অর্ধেকের বেশি প্রার্থী ডোপ টেস্টের জন্য বিআরটিএ থেকে তারিখ নেওয়ার পরেও ফিরে আসেননি।

তবে নিয়মনীতি না থাকায় ডোপ টেস্টের বিষয়টি অন্যত্র গুরুত্ব পায়নি। মাদকের বিস্তার রোধে চাকরিসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার নিয়ম করতে যাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূইয়া ডোপ টেস্ট সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ড্রাগ ডিটেকশন টেস্ট (ডোপ টেস্ট) বিধিমালা-২০২২-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে; কর্তব্যরত অবস্থায় কেউ মাদক সেবন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হলে; ড্রাইভারের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়নের ক্ষেত্রে; কর্মরত গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের সন্দেহ হলে; উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষার্থী মাদক সেবন করেছে বলে সন্দেহ হলে; বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে; আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স মঞ্জুর ও নবায়নের ক্ষেত্রে; বিমান বা জাহাজ পরিচালনার লাইসেন্স মঞ্জুর বা নবায়নের ক্ষেত্রে এবং প্রয়োজনে, সরকার নির্বাহী আদেশ দ্বারা ডোপ পরীক্ষার নতুন ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারে। জানা গেছে, বর্তমানে খসড়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগে বিবেচনাধীন রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ডোপ টেস্টের সীমিত সুযোগ রয়েছে। ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়াতে ডিএনসি প্রাথমিকভাবে দেশের ২২টি স্থানে এবং পরবর্তীতে প্রতিটি জেলায় পরীক্ষাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।

আরও পড়ুন

ধূমপান ছাড়ার বিশেষ কিছু সহজ টিপস

রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাবেন ?

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন, ডোপ টেস্টের উদ্যোগ ভালো। চাকরির আশায়ও অনেকে মাদক থেকে দূরে থাকবেন। মাদক সেবন করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোপ টেস্টের প্রয়োজন হলে, মেডিকেলে ভর্তি হলে ভয়ে অনেকেই মাদক থেকে দূরে থাকবেন। কারণ তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে।

যারা মাদকে আসক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই চাকরির জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাই ডোপ টেস্ট হচ্ছে মাদকের বিস্তার ঠেকানোর কৌশল। বিদেশের রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে চালকদের মুখেই ধরা হয় অ্যালকোহল টেস্টিং মেশিন।

মাদক সেবন করলে লাইসেন্স বাতিল। এটা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা এখানেই প্রশ্ন। কারণ মাদকের শুরু ধূমপান দিয়ে। পরে অন্য মাদক সেবন করে। এটি ৪০ বছর ধরে কাজ করছে। ২০০৫ সালে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়। ২০১৩ সালে, আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। লাভ কি হয়েছে? ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে এর বিপরীতটি সত্য। এ ছাড়া মাদক নির্মূল করতে হলে সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। এই জায়গা গুলোতে সব সময় সবই সরষে ক্ষেতে ভূত থাকে। অনেক রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, অনেক প্রশাসন এর সঙ্গে জড়িত। তা না হলে কোটি  কোটি টাকার চালান আসে কীভাবে? মাদকের গডফাদারদের তালিকাও রয়েছে। তাদেরও  আইনের আওতায় আনতে হবে।এবং হতে হবে কঠিন বিচার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X