November 22, 2024
গর্জনে অর্জনে বাংলাদেশের অহংকার তামিম ইকবালের ক্রিকেটকে গুডবাই

গর্জনে অর্জনে বাংলাদেশের অহংকার তামিম ইকবালের ক্রিকেটকে গুডবাই

গর্জনে অর্জনে বাংলাদেশের অহংকার তামিম ইকবালের ক্রিকেটকে গুডবাই

গর্জনে অর্জনে বাংলাদেশের অহংকার তামিম ইকবালের ক্রিকেটকে গুডবাই

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে জয়ের ধারাবাহিকতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে সকল ক্রিকেটার বাংলাদেশে র মানুষের অন্তরে সমুজ্জল হয়ে থাকবেন । তাদের মধ্যে তামিম ইকবাল অন্যতম, বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ ভালোটি দিয়ে খেলে এ দেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে এমন ব্যাটসম্যান পাওয়া বড় দায়। সেই সম্ভ্রান্ত ক্রিকেট প্রেমী ফ্যামিলির সন্তান তামিম ইকবাল; আন্তর্জাতিক সকল ফরমেটে ক্রিকেটকে বিদায় জানানো নিশ্চয়ই বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্তরে কিছুটা হলেও  ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।

তামিম ২০ মার্চ, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়িতে বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার উচ্চতা ৫’৮”। বাবা ইকবাল খান এবং মা নুসরাত ইকবাল। তার বাবা একজন ফুটবলার এবং ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি ২০০০সালে ইন্তেকাল করেন । তার বড় ভাই সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল। তাদের একটি ছোট বোন আছে। ক্রিকেটার আকরাম খান তার চাচা।

গতকাল রাত থেকেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে ক্রিকেট থেকেই যে এই ওপেনার নিজেকে সরিয়ে নেবেন সেটি ধারণার বাইরে ছিল।

অবশেষে ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দিলেন তামিম ইকবাল। বৃহস্পতিবার হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি জানান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটি তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তামিম। টিস্যু দিয়ে বারবার চোখের জল মুছছিলেন। তিনি  নিজেকে কন্ট্রোল  করতে  পারছিলেননা । তিনি এতটাই আপ্লুত হয়ে পড়েন যে তিনি কথা বলতে পারেননি।

তামিম ইকবাল বলেন, ক্রিকেটকে সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তা সত্ত্বেও, যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে  সে সম্পর্কে আমার অনেক কিছু বলার ছিল; কিন্তু আমি কিছু বলবো না

গণমাধ্যমকে তামিম ইকবাল বলেন, আমার ইতিহাস এখানেই শেষ হোক। আমি কেন অবসর নিয়েছি, কী হয়েছে তা নিয়ে কৌতূহলী হবেন না দয়া করে। আপনি যে কোনো খেলোয়াড়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমালোচনা করবেন।

বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে পরিবারকে ভোলেননি তামিম। তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করছি, যারা আমার কারণে বারবার কষ্ট পেয়েছেন!

আরও পড়তে পারেন

নতুন আফ্রিদি-পুরানা আফ্রিদিঃ জামাই-শশুর
প্রতিদিন দুই ডজন (২৪ টি) ডিম খান পাকিস্তানের এক দ্রুত গতির বোলার !
ক্রিকেটারদের চুইংগাম চিবানোর রহস্য

গতকাল গভীর রাতে চট্টগ্রামে আফগানিস্তান সিরিজ কভার করতে আসা সাংবাদিকদের কাছে খবর পাঠিয়েছেন তামিম, আজ দুপুর ১২টায় কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাবেন তিনি। পরে দুপুর দেড়টায় সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

তামিমের এমন রহস্যময় সংবাদ সম্মেলনের আহ্বানে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে কী বলবেন তামিম? আপনি কি কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে যাচ্ছেন? দুপুর পর্যন্ত এসব নিয়ে কৌতূহল ছিল

সংবাদ সম্মেলনে তামিম ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে অবসরের ঘোষণা দেবেন এমন সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তামিম আরও এগিয়ে গেলেন। ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন।

এর আগে, ১৬ জুলাই, ২০২২, তামিম হঠাৎ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। তারপর থেকে, ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া বাঁহাতি ওপেনার শুধুমাত্র টেস্ট এবং ওয়ানডে খেলছেন।

ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। তিনি দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ -এ কেনিয়ার বিপক্ষে।

তামিম ইকবাল ২০০৯ মৌসুমের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অভিষেক ম্যাচে তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন।  এই ম্যাচে তামিম সহ  ৭ জন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক হয়। তামিমের ব্যাটিং বাংলাদেশকে এনে দেয় ঐতিহাসিক জয়। এটি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় এবং দেশের বাইরেও তাদের প্রথম টেস্ট জয়।

তামিম ১২৮ রানে তার ইনিংস শেষ করেন এবং তার অসামান্য প্রথম টেস্টেই অবদানের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন।

২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ইনজুরির কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে তামিম দেশের হয়ে প্রথম অধিনায়কত্বের স্বাদ পান। তিনি ২০১৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা সফরে তিনটি ওয়ানডেতে দলের নেতৃত্ব দেন। চোট পেয়ে ২০২০ সালে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর, তামিমও ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্ব পান।

সবমিলিয়ে, তিনি ৩৭ টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ২১ টিতে জয়ও  পেয়েছেন। অন্তত ৫ টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি সাফল্যের শতাংশের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক।

এই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একটি বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে বিশ্বকাপ। চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচে একটি  সেঞ্চুরিও   পাননি  তিনি। চারটি অর্ধশতকে মাত্র ২৪.৭৫ গড়ে৭১৮ রান করেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে, ৩১৯ রান তাড়া করতে গিয়ে তার ৯৫ রানের ইনিংসটি বিশ্বকাপে তার সেরা  ক্যারিয়ার।

  • ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন, সেঞ্চুরি ১৪টি, ফিফটি ৫৬টি।
  • তামিম ৭০ টেস্ট ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১০ টি এবং ফিফটি ৩১ টি । এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি করেন তামিম।
  • টি-টোয়েন্টিতে ৭৪ ম্যাচে ১৭০১ রান করেছেন তামিম। এই আসরে দেশের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন একমাত্র তামিম।
  •  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম মোট ২৫ টি সেঞ্চুরি করেছেন এবং তিনটি সংস্করণে মিলে ১৫   হাজারের বেশি রান করেছেন। দেশের আর কোনো ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত রান করতে পারেননি।

সর্বশেষ আমরা এই ভদ্র ,মেহনতী ,শিক্ষিত,বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ  ক্রিকেটার তামিম ইকবালের  সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X