November 25, 2024
ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়ার দই’

ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়ার দই’

ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল 'বগুড়ার দই'

ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়ার দই’

আপনি কোন রকমের মিষ্টান্ন বা মিষ্টি জাতীয় খাবার একটানে এক কেজি পরিমাণ খাইতে পারবেন কি না জানিনা । তবে এটা নিশ্চিত যে, তার ব্যতিক্রম হল বগুড়ার দই বা বগুড়ার সরাই দই; আপনি এক বসাতে মিনিমাম এক কেজি পরিমাণ খেয়ে ফেলতে পারবেন ।আর স্বাদের ঘোরপ্যাঁচে বুঝতেই পারবেন না কোন সময় খেয়ে ফেলছেন। তার পুরস্কার হিসাবে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পেল ‘বগুড়া দই’।

দই বা দধি হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাবার যা দুধের ব্যাকটেরিয়া গাঁজন থেকে তৈরি হয়। সারা বাংলাদেশে দই পাওয়া গেলেও অতুলনীয় স্বাদ ও গুণের কারণে বগুড়ার দই দেশে ও দেশের বাইরে বেশ জনপ্রিয়। ব্রিটিশ আমল থেকেই এর খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে বগুড়ার দই চলে যায় আমেরিকায় । পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এই দই ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

বগুড়ায় দই তৈরির ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরনো। কিন্তু একদিন সনাতন ঘোষ সম্প্রদায় এই দই তৈরি করে বগুড়াকে সারা দেশে পরিচিত করেছিল, এখন সেই ঘোষদের আর দইয়ের বাজার নেই। এটি এখন মুসলিম সম্প্রদায় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের হাতে চলে এসেছে।

গবেষণায় জানা গেছে, বহু  বছর আগে বগুড়ার শেরপুরে প্রথম দই তৈরি হয়। সে সময় বগুড়ার শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ দই তৈরি শুরু করেন। টক দই তৈরির পর প্রজন্ম ধরে তা চিনিপাতা (মিষ্টি) দইতে রূপান্তরিত হয়। আর কালের বিবর্তনে স্বাদের বৈপরীত্যের কারণে দইয়ের বহুমুখী ব্যবহারও শুরু হয়। টক দইয়ে মেজবানি যেমন রান্না করা হয়,  তেমন অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় মিষ্টি দই দিয়ে।

প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস থাকলেও বগুড়ার দইয়ের স্বর্ণযুগ ছিল স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে। তখন এর প্রস্তুতি পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত গোপনীয়। শেরপুরের বিশিষ্ট দই ব্যবসায়ী বৈকালী দই মিষ্টি হাউসের মালিক রাম প্রসাদ রাজভর এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘোষরা দই তৈরির গোপনীয়তা রাখতেন। যে কারণে বাইরের কেউ দই বানাতে পারেনি। কিন্তু তারা আর ধরে রাখতে পারেনি। এখন শেরপুরেই প্রায় ৫০ টি  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দই তৈরি করছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৯/১০  জন ঘোষ পরিবারের। আর বগুড়া শহরে বেশ কিছু দই বিক্রির প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিজেদের দই তৈরি করে। এর মধ্যে রাফাত দই ঘর, মহরম আলী দই ঘর, বগুড়া দই ঘর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শহরের কিছু বড় হোটেল তাদের নিজস্ব দই তৈরি করে। এর মধ্যে আকবরিয়া দই, শ্যামলী দই, রুচিতা দই।  মিষ্টিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত দই তৈরি করছে।

আরও পড়তে পারেন

বেড়েছে গড় আয়ুঃনারীদের গড় আয়ু পুরুষের তুলনায় বেশি
পল্লি চিকিৎসক খোরশেদ ১০ বছরে ৫২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন

বগুড়ার বিখ্যাত সরার দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস (ডিপিডিটি) অধিদপ্তর গত ২৬ জুন এক বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়।

জামদানি দেশের প্রথম ভৌগলিক নির্দেশক (GI) পণ্য হিসাবে নিবন্ধিত হয়। এরপর চারটি নতুন পণ্যসহ দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পায়।একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে কোনো পণ্য উৎপাদনে জনসংখ্যার সংস্কৃতি যদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটি সে দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়।

ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার জানান, বগুড়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির আবেদন যাচাই-বাছাই করে বগুড়ার দইসহ চারটি পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ইলিশ, খিরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুর শতরঞ্জি, দিনাজপুর কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম এর আগেও পরিচিতি পেয়েছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে বগুরের দইসহ চারটি পণ্য। এখন থেকে এই পণ্যটি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে।

বগুড়া দই জিআই পণ্যের স্বীকৃতির আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা বা অঞ্চলে দই উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘বগুড়ার দই’-এর খ্যাতি সারা দেশে। বগুড়ার দই স্বাদ ও মানের দিক থেকে অতুলনীয় কারণ কারিগররা উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করার পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণে সতর্ক থাকেন।

প্রায় আড়াইশত  বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবার বগুড়ার দই উৎপাদন শুরু করে। ঘোষপাড়ার নীলকন্ঠ ঘোষ শেরপুরে দই তৈরির প্রধান পথিকৃৎ।

একটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে একটি পণ্য একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের অন্তর্গত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ সহজতর হয়। এবং যখন পণ্যটি বিদেশে পাঠানো হয়, তখন জিআই স্বীকৃতি পণ্যের গুণমান এবং মূল্য নির্ধারণে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।

আল্লাহর নেয়ামত,  এই দই খাওয়ার উদ্দেশ্য হলেও বগুড়ার দিকে একটি ট্যুর রাখতে পারেন। এবং প্রাণভরে খেতে পারেন আইডিয়াল ফুড ; দুধ  দিয়ে তৈরি বগুড়ার এই দই।

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X