মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের অগ্রগতি নেই
মানব পাচার রোধে বাংলাদেশের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মানব পাচার সংক্রান্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান আগের মতোই রয়েছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ‘২০২৩ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্ট: বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার নির্মূলে ন্যূনতম মান পূরণ করতে পারেনি। তবে এ লক্ষ্যে তারা উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে তিনটি স্তরের মধ্যে দ্বিতীয় স্তরে (টায়ার-২) রাখা হয়েছে যেখানে দেশগুলিকে প্রধানত ২০০০ সালের ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন অ্যাক্ট (টিভিপিএ) এর বাধ্যবাধকতা অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে। তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনটিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার পাচার নির্মূলের ন্যূনতম মান পূরণ করেনি, তবে তা করার জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব সত্ত্বেও সরকার আগের বছরের তুলনায় পাচারবিরোধী অভিযানে সামগ্রিকভাবে বর্ধিত পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই বাংলাদেশ ‘টায়ার-২’-এ। মানব পাচার নির্মূল করার জন্য TVPA-এর ন্যূনতম মানগুলি সম্পূর্ণরূপে মেনে চলতে পারে এমন দেশগুলিকে ‘Tier-১-এ রাখা হয়েছে। এবং যেসব দেশ TVPA-এর ন্যূনতম মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় এবং এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় না তাদের সর্বনিম্ন ‘টায়ার ৩’-এ রাখা হয়েছে। যে দেশগুলি TVPA এর ন্যূনতম মানগুলি সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করেনি সেগুলিকে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয়েছে; তবে তাদের প্রচারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে পাচারকারীদের বিচার করা, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা মানব পাচারের তদন্ত বৃদ্ধি করা এবং সরকার পরিচালিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলির সাথে যুক্ত কিছু নিয়োগ ফি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP) ২০২৫ পর্যন্ত বাড়িয়েছে এবং বাংলাদেশে মানব পাচারের উপর প্রথম জাতীয় জরিপ প্রকাশ করেছে।
তবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ন্যূনতম মান পূরণ করতে পারেনি সরকার।
- সরকার আইন প্রয়োগে তৎপরতা বাড়ালেও নারী পাচার রোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়নি।
- এছাড়া অবৈধ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সাব-এজেন্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
- পাচারের শিকারদের জন্য নিরাপত্তার উদ্যোগ এখনও পর্যাপ্ত নয়।
- আদালত প্রায়ই পাচারকারীদের জেল না দিয়ে জরিমানা করে, যা সরকারের সামগ্রিক পাচার বিরোধী প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।
- এটি পাল্টে পাচারের ভিকটিমদের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব পাচার রোধে সরকারের প্রচেষ্টায় মিশ্র অগ্রগতি হয়েছে। সরকার প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পাচারবিরোধী তথ্য প্রকাশ করেনি। ফলে বাংলাদেশে মানব পাচারের পরিস্থিতি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। সরকার পাচারের শিকার হিসাবে ২৪০ জনকে চিহ্নিত করেছে। এ সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের ১,১৩৮ জনের তুলনায় অনেক কম। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সারা বছর অপর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের কারণে পাচারের শিকারের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি দাবি করেছে যে অন্তত ৬৭৮০ জনকে বিভিন্নভাবে পাচারের শিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।