পাবিপ্রবি হলে আটকে মধ্যরাতে তিন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছে বেপরোয়া ছাত্রলীগ
আপনি মানুষ হোন বা অমানুষ হোন ভাল হোন কিংবা খারাপ হোন আপনি সচ্চরিত্রের হোন বা পিতৃপরিচয়হীন হোন ক্ষমতাবান হোন বা ক্ষমতার বাহিরে থাকুন স্মার্ট হোন বা আন-স্মার্ট হোন স্বচ্ছল হোন বা অসচ্ছল হোন আপনাকে চলে যেতে হবে, শুধু সময়ের ব্যবধানে। আর মনে রাখবেন সকল নির্যাতন , বা আপনার ভালো কাজ সবই ইতিহাস নামক মহাকাব্যে লিখা হয়ে গেছে । সেই লিখা একদিন নাড়াচাড়া দিয়ে উঠবে। তখন হয়তোবা কেউ রেহাই পাবেননা। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধিতা করতে পারেন, কিন্তু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করবেন না । কথাগুলো মনে রাখবেন কারণ এটা ফ্রি প্রেসক্রিপশন ।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) তিন শিক্ষার্থীকে হলের রুমে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের নির্যাতনের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের কোনোভাবেই নির্যাতন করা হয়নি। তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আহত অবস্থায় ছাত্রদের উদ্ধার করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের মাস্টার্সের গোলাম রহমান জয়, ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আসাদুল ইসলাম এবং ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আজিজুল হক। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে আসাদুল ইসলাম ও আজিজুল হককে প্রাথমিক চিকিৎসার পর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় গোলাম রহমানকে পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহত তিন শিক্ষার্থী তারাবির নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী আপেল, শেহজাদ, তৌফিকসহ ১০-১২ জন তাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে এটা ক্যাম্প কিনা। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলে নিয়ে যায়। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তিনটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে স্টাম্প, রড, হকি স্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলে পুলিশে দেওয়া হয়।
আহত শিক্ষার্থীরা জানান, তারাবির নামাজের পর তারা ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় দাড়ি-টুপি রাখার বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। পরে তাদের হলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তারা কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন বলেন, “ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকজন শিবিরকর্মী গোপন বৈঠক করছিল। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের আটক করে। খবর পেয়ে আমরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।
নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) আকবর আলী মুন্সী বলেন, খবর পেয়ে আমরা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভিকটিম অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার সকালে শাওন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাকেও ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবির সন্দেহে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কামাল হোসেন বলেন, ‘শাওন বাসে করে বাড়ি ফিরছেন। আমরা তার সাথে কথা বলেছি, সে ভালো আছে।