মারকুটে আর বেপরোয়া চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ
নানান রুপে ছাত্রলীগ, সিক্সটি-নাইন, ভিক্স, কনকর্ড, রেড সিগন্যাল, এপিটাফ, বাংলার মুখ ও উল্কা বা এমন অদ্ভুত নামে বিভক্ত চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের কেউ দেখে দেখে পরীক্ষা দিচ্ছেন, কেউ বা ছাত্রাবাস থেকে তুলে নিয়ে ‘টর্চার সেলে’ ছাত্র পেটাচ্ছেন। ক্লাসরুমে শিক্ষিকা বা ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করাও তাদের কাছে মামুলি ব্যাপার।
চট্টগ্রামের পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে গেছে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে। একের পর এক ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তারা সবাই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, থাকেন ‘বড়ভাই’দের ছত্রছায়ায়। রাজনৈতিক আশ্রয়ের কারণে বারবার অপরাধ করেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনদের।
চট্টগ্রামের ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেপরোয়া ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে সবেচেয় এগিয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে গত ৩ বছরে সংঘর্ষ হয়েছে অন্তত ১৬০ বার। ২০১৯ সালে জুরেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের কমিটি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর নিজেদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটায় তারা। এসব ঘটনায় ১৫ বার তদন্ত কমিটি হলেও প্রতিবেদন জমা দিয়েছে মাত্র দুটি।
গত বছর জুলাইয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সংঘর্ষ ঘটেছে অন্তত ১২ বার। এতে ৫৬ নেতাকর্মী আহত হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মীরা এক নারী সাংবাদিককে হেনস্তা করে।
অন্যদিকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসের চার ছাত্রের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছাত্রাবাস থেকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের কারণে তাদের দুজনের ঠিকানা হয় আইসিইউতে।
এদিকে শিক্ষিকা লাঞ্ছিত করেও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রাম ওমর গণি এমইএস কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস চলা অবস্থায় ‘দাওয়াত কার্যক্রম’ চালাতে কক্ষে ঢুকে এক শিক্ষিকাকে লাঞ্ছিত করে ডবলমুরিং থানার সাধারণ সম্পাদক ও ওই কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র রাকিব হায়দার। এর আগে অবৈধ অস্ত্র হাতে ভোটকেন্দ্র দখলে গিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন এসব নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া ২০২২ সালে নিজেদের মধ্যে অন্তত ৫০ বার ছোট-বড় সংঘর্ষ, মারামারিতে জড়িয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আগেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতেও নেওয়া হবে।
অন্যদিকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পার্টির কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া উচিত বলে মনে করেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সিটি প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম সুজন।