ছাত্রলীগ দ্বারা ইবিতে ছাত্রী নির্যাতনঃ প্রভোস্ট ও প্রক্টরের ‘চরম উদাসীন ও দায়সারা’ভূমিকাকেই দায়ী করলেন আদালত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলম, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইশরাত জাহানসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলা পেয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কর্মকাণ্ড উদাসীন ও দায়সারা বলে প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।
এছাড়া ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে তদন্ত কমিটির পৃথক দু’টি প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। বুধবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) আদালত আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইবি ছাত্রী ফুলপরীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তার আগের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও সহকারী প্রক্টর শাহবুব আলম বলেন, প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। উনাদের বক্তব্যের আলোকেই প্রতিবেদনে ‘উদাসীনতার’ কথা বলা হয়ে থাকতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনে শুধু পরিস্থিতিগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কে অভিযুক্ত বা অভিযুক্ত না সেটা বলিনি। পুরো পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। বাকি সিন্ধান্ত আদালত নিবেন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, হাইকোর্ট কি বলেছেন তার কোনো লিখিত প্রতিবেদন আসেনি। প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর কেউই রাতে হলের ওই বিল্ডিংয়ে থাকে না। র্যাগিং তো কারও উপস্থিতিতে হয় না। তাছাড়া সবাই আমাদের সন্তান তুল্য। আমাদের সামনে ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ নেই। আমি এবং প্রক্টরিয়াল বডির দুজন সদস্য বিষয়টি প্রথমে সমাধান করেছিলাম।
ভুক্তভোগীকে সহযোগিতা করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে প্রভোস্ট বলেন, মেয়েটা অসহায় এ কারণেই তাকে হলে রাখার সিন্ধান্ত নেই। তাহলে সহযোগিতা করলাম না কোথায়?
অভিযুক্তদেরকে সহযোগিতা করার বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রশ্নই আসে না, এমন কোনো কাজই উৎসাহিত করিনা।
প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ফুলপরীর বিষয়ে কোনো উদাসীনতা করা হয়নি। তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে। ঘটনা সংঘটিত হয়েছে রাতে এবং হল কর্তৃপক্ষ বা ভুক্তভোগী কেউই জানায়নি। প্রথম জানতে পারি অফিসে জমা দেওয়া আবেদন থেকে। আমার কাছে আবেদন আসা মাত্রই তদন্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উপাচার্য বরাবর উপস্থাপন করি এবং সেই আলোকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত চলাকালীন সময়ে ভুক্তভোগীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।