গরুচোর ছাত্রলীগ নেত্রী বাবলীর বিরুদ্ধে চার্জশিট
“টেন্ডারবাজির মাধ্যমে চুরি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চুরি, চাকরি দেওয়ার নামে চুরি, রাস্তাঘাটের ফকির, অন্ধ ভিক্ষুকসহ ছোট-বড় সকল রকমের দোকান থেকে চাঁদাবাজি করে চুরি, এমনকি ঘরে সিঁধ কেটে চুরি,গুলিস্তানে পকেট মেরে চুরি , এসকল চুরির বাইরে অন্যান্য আরও হরেক রকমের চুরি পেশার নেশার পরেও কেনো যে গরু চুরি করতে গেল? কেন এত আনস্মার্ট চুরি? বুঝতে পারছি না। এত আনস্মার্ট কর্মের জন্য ছাত্র-আওয়ামীলীগ(ছাত্রলীগ) সমীপে দলীয়ভাবে শাস্তির আবেদন করতেই পারি। ”
সাভারের ধামরাইয়ে গরু চুরির মামলায় ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক বাবলী আক্তারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- মোঃ হাবুল সরদার, আরিফ হোসেন, রাজু আহমেদ, শাহাদাত হোসেন, মোঃ সাইদুল ইসলাম, মোঃ মোরশেদ আলী।
গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নেতা বাবলী চোরাই গরু বিক্রির ওস্তাদ। এ তথ্যের সত্যতা পেয়ে তার নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর গরু চুরির ঘটনায় আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ধামরাই থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় ওই বছরের ২ নভেম্বর ভোরে সাভারের রেডিও কলোনি এলাকা থেকে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। এছাড়া পলাতক গরু চোর শহীদ ও ট্রাক চালকের নাম ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের মুক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিনে ধামরাই উপজেলার লাডুয়াকুন্ডসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে ২০টি গরু চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ধামরাইয়ের লাডুয়াকুন্ড গ্রামের আব্দুল লতিফের একটি ষাঁড় ও একটি গরু গত অক্টোবর রাতে চুরি হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা। ওই রাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা হাবুল সরদার নামে এক চোরকে ধাওয়া করে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ করে। হাবুল সরদার বরিশাল জেলার মুলাদী থানার মৃত কদম আলী সরদারের ছেলে। এ ঘটনায় গরুর মালিক আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ধামরাই থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশের হাতে আটক হাবুল সরদারের স্বীকারোক্তির পর ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ববলী আক্তার ও চোরাই গরু বহনকারী ট্রাক চালক রিপনকে আটক করা হয়। এরপর ৩ নভেম্বর ভোররাতে ধামরাই থানা পুলিশ সাভারের রেডিও কলোনির নয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা ববলী আক্তার, রাজু আহমেদ (২৪), রিপন ওরফে আরিফ (২২), শাহাদাত হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার করে।
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে সাভারের ধামরাইয়ের আব্দুল লতিফ তার দুইটি গরু গোয়াল ঘরে রেখে দরজায় তালা মেরে ঘুমাতে যান। এরপর রাত সাড়ে তিনটির দিকে বাইরে শব্দ শুনতে পান। ঘুম থেকে উঠে দেখেন ৪/৫ জন চোর তার দুইটি গরু ট্রাকে তুলে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন বের হন। ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে আহত হন আসামি হাবুল সরদার। এরপর স্থানীয় জনসাধারণ তাকে আটক করে। আসামি আরিফ হোসেন, রাজু আহম্মেদ, শাহাদাত হোসেন, মো. মোর্শেদ আলী ও পলাতক আসামি শহীদ গরু দুইটি চুরি করে নিয়ে এসে আসামি বাবলী আক্তারের কাছে বিক্রয় করে। এরপর আসামি বাবলী লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে গরুগুলো পুনরায় উল্লেখিত আসামিদের মাধ্যমে বেশি দামে অন্যত্র বিক্রয় করেন।
আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর গাজীপুর থেকে আসামি সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় চুরি হওয়া দেড় লাখ টাকা মূল্যের গর্ভবতী গাভি উদ্ধার করা হয়। এরপর আসামি সাইদুল ইসলাম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে- সে একজন কসাই। ধামরাইয়ের মোরশেদ ও শহীদের কাছে থেকে দুইটা গরু ক্রয় করেছেন। আসামি হাবুল সরদার, আরিফ হোসেন, রাজু আহম্মেদ, শাহাদাত হোসেন, মোর্শেদ আলী ও পলাতক আসামি শহীদ এবং অজ্ঞাত চালকের বিরুদ্ধে এই মামলার পেনাল কোড ৪৫৭/৩৮০ ধারার অপরাধ, আসামি বাবলীর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪১৩ ধারার অপরাধ এবং আসামি সাইদুল ইসলাম বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪১১ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। পলাতক আসামি শহীদ ও ট্রাকের অজ্ঞাতনামা চালকদ্বয়ের সঠিক নাম ঠিকানা না পাওয়ায় মামলার দায় হতে অব্যাহতির প্রার্থনা করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে এ মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে।
1 Comment