October 18, 2024
৭ মাত্রার উপরের ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ঘটে যেতে পারে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধ্বংসলীলা

৭ মাত্রার উপরের ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ঘটে যেতে পারে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধ্বংসলীলা

৭ মাত্রার উপরের ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ঘটে যেতে পারে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধ্বংসলীলা

৭ মাত্রার উপরের ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ বাংলাদেশে ঘটে যেতে পারে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধ্বংসলীলা

বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত তুরস্ক,ও  সিরিয়া। স্তব্ধ, ব্যথিত তামাম জাহান  প্রকৃতির অসমাদরের  সামনে মানুষের অসহায়ত্ব আবারো প্রকাশ পায়। গত সোমবার সকালে দুঃস্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় এই দুই দেশের লাখো মানুষ। আমরা খুব ভোরে এটা জানার আগেই, স্মরণের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তুরস্ক এবং সিরিয়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায়।

তুরস্ক তার ১৯৩৯ সালের পর ৮৪ বছরের ইতিহাসে এত ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প দেখেনি। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৭.৮। এক মিনিট স্থায়ী ভূমিকম্পে শত শত ভবন, বাড়িঘর ও বহুতল ভবন মাটিতে মিশে যায়। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকে আছে কয়েক হাজার মানুষ। উদ্ধার অভিযানের পর মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনুমান করা কঠিন।

এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। সব মহলে আলোচনা- অদূর ভবিষ্যতে এই ভূমিকম্প আরও হতে পারে কি না? বিশেষ করে তুরস্কের মতো উন্নত দেশে ভূমিকম্পের তীব্রতা এত তীব্র হলে স্বল্পোন্নত দেশে একই মাত্রার ভূমিকম্প হলে কী হবে?

এদেশের সাধারণ মানুষের এখন একই প্রশ্ন- বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার সম্ভাবনা কতটা বা ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় কী হবে? যে কোনো সময় বিপদ আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। মূলত, ভূগর্ভস্থ ফল্ট লাইন ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ভূত্বকের বড় অংশ টেকটোনিক প্লেট নামে পরিচিত। এবং দুটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে ফাটলকে ফল্ট লাইন বলে। একটি ফল্ট লাইন বরাবর দুটি প্লেটের সংঘর্ষ হলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তুরস্ক বরাবরই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। দেশে প্রতি বছর ছোট থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সম্ভাবনায়, ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডসহ সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের প্রায় ৫টি ফল্ট (ফল্ট লাইন) রয়েছে। এগুলো ঢাকা শহর থেকে এক থেকে দেড়শ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে ছোট দেশ হওয়ায় যেকোনো ফল্ট লাইনে সংঘর্ষ সারা দেশে অনুভূত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত ছোট থেকে মাঝারি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, তবে ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয় বড় ভূমিকম্প সাধারণত প্রতি ১০০  থেকে ১৫০ বছরে অনুভূত হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে যেকোনো সময় ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।

রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা শহরে প্রাণ হারাতে পারে অন্তত ৩ লাখ মানুষ। বড় ভূমিকম্পে ঢাকার কী ক্ষতি হতে পারে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা যায় , একশ বছর আগেও ঢাকা শহরে খুব কম ভবন ছিল। মানুষের বাসস্থানও ছিল খুবই কম। আর ঢাকায় এখন প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস, রয়েছে ছয় লাখের বেশি বহুতল ভবন। বড় ধরনের ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে সাম্প্রতিক কোনো গবেষণা নেই। তবে, পূর্ববর্তী গবেষণায় বলা হয়েছে যে ৬ মাত্রার উপরে ভূমিকম্প হলে, আমাদের দেশে ক্ষয়ক্ষতি তুরস্কের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হবে। শুধু ঢাকা শহরেই এ ধরনের ভূমিকম্পে দুই থেকে তিন লাখ মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। অন্তত ২৫ শতাংশ উঁচু ভবন মাটির সঙ্গে মিশে যেতে পারে। ভূমিকম্পের পর বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।

অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া যায় না। ফলে এ দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে কিছু দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ ক্ষতি কমাতে পারে। ঢাকা শহরের দশ বা তার বেশি উঁচু ভবনে বিনিয়োগ বেশি হওয়ায় সেগুলোকে কিছুটা ভূমিকম্প প্রতিরোধী করে তৈরি করা হয়। চার-পাঁচতলা ভবনে এটা করা হয় না। ফলে এসব মাঝারি ভবনে ঝুঁকি বেশি।

প্রশাসনের উচিত ভূমিকম্প সহনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা। জরিপের মাধ্যমে পুরনো ভবনগুলোর মেরামত ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ফায়ার ব্রিগেডকে প্রশিক্ষণ ও আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম রাখতে হবে। যাইহোক, যেহেতু একটি বড় ভূমিকম্পের পরে উদ্ধার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি বেশি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ, তাই আমাদের  সঠিকভাবে ভবন নির্মাণের দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X