গোটা বাংলাদেশ এখন নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকিতে
গোটা দেশ এখন নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকিতে। এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় কাঁচা খেজুরের রস পান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বছর দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত সকলেরই খেজুরের রস পান করার ইতিহাস রয়েছে। অনলাইনে জুস বিক্রি হওয়ায় তা সহজলভ্য হওয়ায় সারাদেশে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়েছে।
সরকারের এপিডেমিওলজি ইনস্টিটিউট, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিআর) অনুসারে, এ বছর এ পর্যন্ত ১০ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে চারজনের বাড়ি রাজবাড়ি। এ ছাড়া শরীয়তপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, নাটোর ও ঢাকায় একজন করে একজন করে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে রাজবাড়ীতে তিনজনসহ সাতজন মারা গেছেন। যে তিনজন বেঁচে আছেন, তাদের জীবনও বিপন্ন।
আইইডিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরো দেশ এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ এখন অনলাইনে খেজুরের রস বিক্রি হয়। অনেকেই এই জুস কিনে সেলিব্রেট করেন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, বাদুড় নিপাহ ভাইরাস বহন করলেও সংক্রমিত হয় না। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমরা বন কেটে ফেলছি। আগে বাদুড়রা বনের বন্য ফল খেয়ে বেঁচে থাকত। এখন বিকল্প খাবারের সন্ধানে ঝুঁকছে খেজুরের রসের দিকে। এতে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। কাঁচা খেজুরের রস কখনই খাওয়া উচিত নয়।
যারা গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করেন তাদের সতর্ক থাকা খুবই জরুরি। এর কারণ হল রস খাওয়ার সময় বাদুড়ের প্রস্রাব বা মল গাছের সাথে লেগে থাকতে পারে। এ জন্য রস আহরণের পর সাবান দিয়ে গোসল করা এবং কাপড় ধোয়া নিরাপদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। অনেক গবেষণা করা হচ্ছে, রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। একই সময়ে, আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআরবি একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. এস এম গোলাম কায়সার বলেন, “আমরা হটস্পট জেলাগুলোর মানুষকে সতর্ক করার জন্য কাজ করছি, অর্থাৎ যেসব জেলায় মানুষ কাঁচা খেজুরের রস বেশি খায় এবং অতীতে বেশি সংক্রমিত হয়েছে।”