প্রস্রাবের নমুনা থেকে কালাজ্বর শনাক্তের পদ্ধতি আবিষ্কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের
প্রস্রাবের নমুনা থেকে রিয়েল টাইম পিসিআর প্রযুক্তির সাহায্যে কালা আজার বা কালাজ্বর রোগ শনাক্তকরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। মলিকুলার ডায়াগনস্টিক এ পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং রোগী-বান্ধব পদ্ধতি হিসেবে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিমের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন গবেষক গত সাত বছর ধরে এ গবেষণা পরিচালিত করেছেন। সম্প্রতি এ গবেষণার ফলাফল বিশ্বখ্যাত পিএলওএস গ্লোবাল পাবলিক হেলথ র্জানালে প্রকাশিত হয়েছে।“
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আবিষ্কারের কথা জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দীন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক একেএম মাহবুব হাসান, চিকিৎসা অনুষদের ডিন ডা. শাহরিয়ার নবীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতিতে মানুষের বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে কালাজ্বরের পরজীবী শনাক্ত করা হয়। এতে সাতদিনের মতো সময় লাগে। আবার আরটিপিসিআর ও র্যাপিড অ্যান্টিজেনের মাধ্যমেও স্বল্প সময়ে পরীক্ষা করা যায়। তবে এগুলো জটিল পদ্ধতি। নতুন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে মূত্র নমুনা ব্যবহার করে আরটিপিসিআর মেশিনের সাহায্যে মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই কালাজ্বর শনাক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে সময় বাঁচানোর পাশাপাশি নতুন এ উদ্ভাবন স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমাবে।
তিনি জানান, ‘প্রচলিত পদ্ধতি ইনভেসিভ, কিন্তু আমাদের উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতি নন- ইনভেসিভ। অর্থাৎ কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, ফলে এটি রোগীবান্ধব। তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে নমুনা হিসেবে অস্থিমজ্জা, স্প্লিন অ্যাসপিরেট কিংবা লিভার বায়োপসি সংগ্রহ করা একটু জটিল। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিও আছে। কিন্তু ইউরিন বা প্রসাব সংগ্রহ করা খুবই সহজ বিষয়। তাই এ পদ্ধতিতে সে ধরনের কোনো ঝুঁকিই নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ পদ্ধতিতে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদ দেন। এ বিষয়ে প্রশাসনিক সহযোগিতার কথাও জানান।
উল্লেখ্য, গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একটি উপেক্ষিত রোগ কালাজ্বর ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতি রোগ। বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে কালাজ্বর এর প্রকোপ আছে। কালাজ্বর এর সংক্রমণ এতটাই গুরুতর ও মারাত্মক হয়ে থাকে যে, এ রোগে মৃত্যুহার শতকরা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে যদি চিকিৎসা করানো না হয়।