ঋণখেলাপি আর অর্থ পাচারে খাদের কিনারে বাংলাদেশর ব্যাংকিং খাত:টিআইবি
ইসলামী ব্যাংকসহ তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি মহল। ভুয়া ঠিকানা ও অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। আকাশছোঁয়া খেলাপি ও মানি লন্ডারিংয়ের কারণে ব্যাংকিং খাত ইতিমধ্যেই খাদের কিনারে পৌঁছে গেছে। এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। সংস্থাটি সরকারকে অবিলম্বে বেসরকারী খাতে ‘সত্য মালিকানার স্বচ্ছতা’ আইন প্রণয়নের জন্য এবং ‘কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)’-এ যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যা গভীর সংকট রোধ করতে আর্থিক লেনদেন নিরীক্ষণে সহায়তা করে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে অতি কৌশলে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য ভয়াবহ।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাধারণ গ্রাহক ব্যাংক থেকে ন্যূনতম পরিমাণ ঋণ নিতে চাইলেও তাকে কী ধরনের নথিপত্র দিতে হয়, কিন্তু কীভাবে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তোলা যায়? জাল বা জাল প্রতিষ্ঠানের নাম। তিনি বলেন, আগের তুলনায় গত ১৪ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বারবার পরিবর্তন বা পুনঃতফসিল করার পরও ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও কার স্বার্থে এত আগ্রাসী ঋণ দেওয়া হচ্ছে, কারা এই বিপুল অর্থের সুবিধাভোগী? এই প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার নাগরিকদের আছে।
নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং পিকে হালদারের জালিয়াতির মাধ্যমে লুটপাট ও অর্থ পাচারের পরও কেন শিক্ষা নেওয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বেনামে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের অনেক নির্ভরযোগ্য তথ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশে প্রতিনিয়ত প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য আমদানিতে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৮২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়। এই অর্থ পাচার রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের মালিকানা বা শীর্ষ পদে পরিবর্তন এসব ব্যাংকের আমানত হারাতে সহায়ক। তখন ব্যাংকের মালিক বা পরিচালনা পর্ষদ ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এবং যোগসাজশের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুটপাটে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ বহুগুণ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতকে অতল গহ্বর থেকে বাঁচাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।