আরো কমে গেলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভঃ কঠিন চাপে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ডলার সংকটের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এতে চাপে পড়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল সোমবার দেশের রিজার্ভ ৩৪ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসাব করলে রিজার্ভ আরও ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। সেই হিসেবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সরকারের আমদানি দায় পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি মাসের ২১ দিনে ৯৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি বিক্রি করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ ৫৫৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কিনেছিল প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার। এদিকে ডলারের ক্রমাগত বিক্রির কারণে রিজার্ভ চাপে রয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতি মাসে আমদানিতে সরকার ব্যয় করে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। অর্থাৎ রিজার্ভের পরিমাণ দিয়ে এখন সাড়ে তিন মাসের আমদানি দায় পরিশোধ করা যাবে। যাইহোক, রিজার্ভ সবসময় সব আমদানির জন্য ব্যবহার করা হয় না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক অত্যাবশ্যকীয় সরকারি পণ্য আমদানিতে ডলার বিক্রি করে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে নতুন এলসি খোলা কমে গেছে। কিন্তু পূর্বে খোলা এলসির দায় এখন বকেয়া বা বিলম্বে পরিশোধের শর্তে প্রদেয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার দাম কমেনি। যার কারণে ডলারের সংকট দিন দিন বাড়ছে। অর্থনীতি চাপের মুখে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিগত কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অক্টোবরে ঋণপত্র খোলা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কম। গত সেপ্টেম্বরেও ৮ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল। এছাড়া চলতি নভেম্বরের ১ থেকে ১৬ নভেম্বর ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ শতাংশ কম।