“তোমার কালেমা তোমার রুটি যোগায়, আর আমার কালেমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায় ” !
১৯৬৬ সালে, তিনি মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসেরকে হত্যার মিথ্যা ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁর তাফসীর “ফী জিলালিল কুরআন” বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত তাফসীর এবং বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত তাফসীর।
১৯৬৬ সালের ২৫ আগস্ট জেলে থাকা অবস্থায় সাইয়্যেদ কুতুব শহীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। আজও কেউ বলতে পারে না, তার কবর কোথায়!
যেদিন সাইয়্যেদ কুতুবকে হত্যা করা হয়, সেদিন তার তাফসীর ‘ফী জিলালিল কুরআন’-এর সাত-আট হাজার সেট, অর্থাৎ চৌষট্টি হাজার বই মিশর যাওয়ার পথে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, সাইয়্যেদ কুতুবের কিতাবসহ যে কাউকে পাওয়া যাবে তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। সাইয়্যেদ কুতুবের বইগুলো জাদুর মতো। যে এটি পাঠ করে সে তার অনুসারী হয়।
বিভিন্ন দেশের পত্র-পত্রিকায় ও রেডিওতে যখন তাঁর শাহাদতের খবর প্রচারিত হয়, তখন সবার মনে একটি প্রশ্ন জেগে ওঠে, কে এই ব্যক্তি? কেন তাকে ফাঁসি দেওয়া হল?
যে বইটির জন্য তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, সেই তাফসীরের বইটি কেমন?
তখন বৈরুতের প্রকাশকরা তাকে বলতেন প্রকাশনা জগতে কোন খ্রিস্টান লোকসান খেলে তাকে বলতো আর তুমি যদি বাঁচতে চাও তাহলে সাইয়্যেদ কুতুবের ‘ফি যিলালিল কুরআন’ ছাপ। হ্যাঁ, যে বছর সৈয়দ কুতুবের ফাঁসি হয়েছিল সেই বছরই তাঁর তাফসীরের সাতটি সংস্করণ ছাপা হয়েছিল।
কিন্তু তা তাঁর জীবদ্দশায় একবারই ছাপা হয়েছিল।
আর এখন অবস্থা এমন যে পৃথিবীর এমন কোন অংশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে সাইয়েদ কুতুবের এই তাফসীর পৌঁছেনি। এমন কোনো ভাষা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে অনুবাদ করা হয়নি।
ফাঁসির আগের রাতে কারাগারের ইমামকে সাইয়্যেদ কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ) কে কালেমা পড়াতে পাঠানো হয়েছিল। জেলের ইমাম এসে সাইয়্যেদ কুতুবকে কালেমা পড়ানোর চেষ্টা করেন।
তাকে দেখে সাইয়্যেদ কুতুব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এখানে কেন এসেছেন?
ইমাম বললেন, আমি আপনাকে কালেমা পড়াতে এসেছি। ফাঁসির আগে আসামিকে কালেমা পড়ানো আমার কর্তব্য।
সাইয়্যেদ কুতুব বললেন, তোমাকে এ দায়িত্ব কে দিয়েছে? ইমাম বলেন, সরকার দিয়েছে।
সাইয়্যেদ কুতুব বললেন, তুমি কি বিনিময়ে বেতন পাও?
ইমাম বলেন, হ্যাঁ সরকার থেকে বেতন পাই।
তখন সায়্যিদ কুতুব (রহ).বললেন, কী আশ্চর্য! যেই কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান, সেই কালিমার ব্যখ্যা মুসলিম উম্মাহকে জানানোর অপরাধেই আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে!
সুতরাং
“তোমার কালেমা তোমার রুটি যোগায়,
আর আমার কালেমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায় ”!