November 22, 2024
জলদস্যুরা অস্ত্র তাক করে আছে: মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশি জিম্মি নাবিকরা

জলদস্যুরা অস্ত্র তাক করে আছে: মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশি জিম্মি নাবিকরা

জলদস্যুরা অস্ত্র তাক করে আছে: মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশি জিম্মি নাবিকরা

জলদস্যুরা অস্ত্র তাক করে আছে: মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশি জিম্মি নাবিকরা

সোমালিয়া থেকে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে উদ্ধারের জন্য অপহরণকারীদের সাথে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।

ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি এমভি আবদুল্লাহর ২৩ জন নাবিক অক্ষত কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কারণ দস্যুরা প্রতিনিয়ত তাদের দিকে ভারী অস্ত্র তাক করছে। বন্দুকের মুখে সবকিছু করতে বাধ্য করা হচ্ছে। নাবিকদের প্রতিটা মুহূর্ত কাটে চরম আতঙ্কে। কবে নাগাদ এই জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে তা নিশ্চিত না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। দস্যুরা মোবাইল ফোনসহ সকল যোগাযোগ যন্ত্র কেড়ে নিয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। জাহাজে খাবার পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়। অপহরণের চার দিন পরও তাদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে নাবিকদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের মধ্যে। তবে জাহাজ মালিকরা বলছেন, জিম্মিদের উদ্ধারে সব কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অপহরণকারী দস্যুদের সঙ্গেও নানাভাবে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। ফলে তাদের উদ্ধারে সময় লাগবে বেশ।

জাহাজটি সোমালি উপ-সমুদ্র এলাকায় নোঙর করার পর জলদস্যুদের নির্দেশে প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান জাহাজের মালিকের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানা গেছে। প্রধান কর্মকর্তা দস্যুদের দাবি ও মুক্তিপণের কথা জানান বলেও জানা গেছে। তবে কৌশলগত কারণে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স-ইউনাভফোর জানিয়েছে যে তারা এখনও ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজরদারি করছে।

‘অপারেশন আটলান্টা’ নামে কাজ করা সংস্থাটি বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘অপারেশন আটলান্টা’ এখনও বাংলাদেশি পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর জলদস্যুতা অনুসরণ করছে। ছিনতাইয়ের সময় এমভি আবদুল্লাহতে ২০ জন সশস্ত্র জলদস্যু উপস্থিত ছিল কিন্তু এখন জাহাজে ১২ জন জলদস্যু রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

কিছুদিন আগে একই এলাকায় জলদস্যুতার শিকার হয় এমভি রুয়েন নামের আরেকটি জাহাজ। ‘অপারেশন আটলান্টা’ বিশ্বাস করে যে জাহাজটি ছিনতাইকারী একই জলদস্যু গ্রুপ এমভি আবদুল্লাহ ঘটনার সাথে জড়িত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমালি উপ-অঞ্চলের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে সোমালি জলদস্যুদের তিনটি সম্ভাব্য দল চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ক্যাম্প থেকে জলদস্যুরা জাহাজ ছিনতাইয়ে সহায়তা করে। “অপারেশন আটলান্টা” বলেছে যে এমভি আবদুল্লাহর চারপাশে তাদের অভিযান এখনও চলছে, ছিনতাই হওয়া জাহাজের অবস্থা এখনও একই এবং জাহাজের নাবিকরা নিরাপদ। সর্বশেষ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে অপারেশন আটলান্টা “কার্যকর পদক্ষেপ” নিতে এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশি এবং সোমালি কর্তৃপক্ষ এবং অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করছে।

এদিকে এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান তার ছোট ভাইকে একটি অডিও বার্তা পাঠান। আতিক উল্লাহ খান বলেন, নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, বুধবার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ আসছিল, একটি আজ বৃহস্পতিবারও এসেছে। মোট দুজন আমাদের উদ্ধার করতে এসেছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি, কারণ তখন তারা আমাদের মাথায় অস্ত্র রেখে  জিম্মি করে।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে এমভি আবদুল্লাহ ১২ মার্চ ডাকাতদের আক্রমণের শিকার হয়। কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এসআর শিপিং সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন করে। ডাকাতদের হাতে জিম্মি থাকার সময় নাবিকরা এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষ এবং আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে। প্রধান কর্মকর্তা আরও জানান, মুক্তিপণ না দিলে ডাকাতরা তাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোমালি উপকূল থেকে সাত মাইল দূরে ছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি সেখানেই রয়েছে। নাবিকদের বন্দুকের মুখে জিম্মি করা হয়। দস্যুদের বন্দুকের মুখে সবকিছু  মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ অবস্থায় জিম্মিদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। জিম্মি জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় এ তথ্য জানান। অডিও বার্তায় তিনি বলেন, জলদস্যুরা  অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়ার একদিন পর দস্যুরা ২৩ জন নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটিকে কাছাকাছি অন্য এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যায় ডাকাতরা। গতকাল এমভি আবদুল্লাহর মালিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X