লিবিয়ায় ৬ হাজারের বেশি নিহত: লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাসছে সাগরে: এখনও বাড়ছেই মৃতের সংখ্যা
(লিবিয়া, আনুষ্ঠানিক নাম ‘লিবিয়া রাজ্য’, ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ তীরে উত্তর আফ্রিকার একটি দেশ। লিবিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে মিশর, দক্ষিণ-পূর্বে সুদান, দক্ষিণে চাদ ও নাইজার এবং পশ্চিমে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া অবস্থিত। ত্রিপোলি শহরটি লিবিয়ার বৃহত্তম শহর এবং রাজধানী, যা ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত। লিবিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম দেশগুলির মধ্যে একটি। আয়তনে বিশাল হলেও লিবিয়ার জনসংখ্যা কম। দেশের অধিকাংশ এলাকা সাহারা মরুভূমি দ্বারা আবৃত। লিবিয়ার প্রায় সব মানুষই উপকূলীয় এলাকায় বাস করে। লিবিয়ার তিনটি প্রধান অঞ্চল হল ত্রিপোলিটানিয়া, ফেজ এবং সাইরেনাইকা। লিবিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম এবং আরবি সরকারী ভাষা।)
এ পর্যন্ত লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেরনা শহর ও এর আশপাশের এলাকা প্লাবিত করা ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসনের একজন মন্ত্রী হিশাম চোকিওয়াত বলেছেন যে “দেহের পর দেহ সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে”। আবার অনেকে বডি ব্যাগসহ ত্রাণ সহায়তা দাবি করছেন। আর নিহতদের অনেককে গণকবরে দাফন করা হয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা ভবনগুলির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, অন্তত ১০,০০০ মানুষ এখনও নিখোঁজ এবং অন্তত ৩০,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হাসপাতাল ও মর্গগুলো মানুষের লাশে উপচে পড়ছে।ডেরনার কাছে একটি হাসপাতালে কর্মরত লিবিয়ান চিকিৎসক নাজিম তারহানি বলেন, আরও সাহায্যের প্রয়োজন।“হাসপাতালে আমার অনেক বন্ধু আছে যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে। তারা সবকিছু হারিয়েছে,” “আমার এমন লোক দরকার যারা পরিস্থিতি বোঝে। প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রয়োজন। কুকুর প্রয়োজন যারা ঘ্রাণ শুঁকে মানুষ বের করে নিয়ে আসতে পারবে। আমাদের মানবিক সাহায্য দরকার।
এছাড়া বিশেষায়িত ফরেনসিক ও উদ্ধারকারী দলের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও, আরেকটি দলের প্রয়োজন যারা মৃতদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ।
এদিকে নগরীর রাস্তাগুলো কাদা ও ধ্বংসাবশেষে ঢেকে গেছে। সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ভাঙাচোরা গাড়ি।
অন্যদিকে লিবিয়ান ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছে, কয়েকজন বিখ্যাত খেলোয়াড় মারা গেছেন। তারা শাহীন আল জামিল, মান্দার সাদাকা, সালেহ সাসি এবং আইয়ুব সাসি- চার ফুটবলারের নামও প্রকাশ করেছে।
তেল সমৃদ্ধ লিবিয়া ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির মৃত্যুর পর থেকে রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ত্রিপোলিতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা স্বীকৃত একটি সরকার রয়েছে। আরেকটি সরকার পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে।
ডেরনা শহরের একটি প্লাবিত এলাকা। ডেরনা শহরটি বেনগাজি থেকে সাড়ে বাইশ কিলোমিটার পূর্বে। দেরনা শহরের দক্ষিণে একটি বাঁধ ভেঙে শহরের বড় অংশ ডুবে গেছে।
প্রভাবশালী এক জেনারেল জানান, তারা বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিচ্ছেন। লিবিয়ার আল ওয়াসাত নিউজ ওয়েবসাইট বলছে, মৃতের সংখ্যা বেশি কারণ ডেরনা শহরের রাস্তাগুলো বহু বছর ধরে পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার করা হয়নি।
ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত লিবিয়া। দেশটির দেরনা শহরে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। দেশটির স্থানীয় মন্ত্রীর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় মন্ত্রী সতর্ক করেছেন যে, মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনামির মতো বন্যায় সাগরে ভেসে যাওয়া মানুষদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকারী দল।
ইতিমধ্যে সেখানে ছোট আকারের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। এতে যোগ দেয় মিশরও। তবে লিবিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইরান, ইতালি, কাতার ও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ জানিয়েছে তারাও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত। লিবিয়ায় রবিবার অন্ধকারে তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে শহরের রাস্তায় বন্যার পানিতে কয়েক ডজন গাড়ি ভেসে গেছে।
সাগরের পানিতে বহু মানুষের ভেসে যাওয়ার দুঃখজনক ঘটনার পাশাপাশি আত্মরক্ষার্থে অনেকেই বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।
আরও পড়ুন
বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে পাকিস্তানে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী মালালা
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে সরকারের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে হিশাম চোকিওয়াত বলেছেন, “আমি যা দেখেছি তাতে আমি হতবাক। এটা ছিল সুনামির মতো।
আলী দেবিয়াহ নামে এক ব্যক্তি জানান, উদ্ধারকারীরাও লাশ উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছেন। তবে নৌবাহিনী ও ডুবুরিরা সাগর থেকে মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
বায়দা শহরের একজন সাহায্য কর্মী কাসিম বলেন, শহরের প্রধান সড়কগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকারীদের দেরনা শহরে পৌঁছানো কঠিন ছিল।
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত লিবিয়া। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশিও রয়েছে , রয়েছে বাংলাদেশীও । দেশের ডেরনা শহরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে কেন বন্যায় এমন ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।