মাটির তৈরী দৃষ্টিনন্দন মালির ডিজনির গ্রেট মসজিদ
মসজিদ ইসলামি সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) মদিনার মসজিদ আল-নবাবীতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মুসলমানরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছে সেখানেই তারা মসজিদ নির্মাণ করেছে। আফ্রিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। আফ্রিকায় প্রথম মসজিদটি সাহাবায়ে কেরামের যুগে ৫০ হিজরীতে নির্মিত হয়। আফ্রিকা মহাদেশের মালিতে অবস্থিত, দ্য গ্রেট মস্ক অফ ডিজনি, মালি মসজিদের ঐতিহাসিক এবং নান্দনিক স্থাপত্য এখানে রয়েছে।
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মালির জেনি মসজিদের নির্মাণশৈলী এখন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিমুক্ত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মাটির মসজিদ। মসজিদটি মাটি, বালি ও পানির সাহায্যে নির্মিত। তবে দেয়ালের গাঁথুনি মজবুত করতে নির্দিষ্ট দূরত্বে দূরত্বে খেজুর গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় একে ‘টোরন’ বলা হয়। মসজিদটি ১২০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। মালির সুলতান কানবারু ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তার প্রাসাদ ভেঙ্গে সেখানে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি মসজিদের পূর্ব পাশে তার বসবাসের জন্য আরেকটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। তার উত্তরসূরিরা এই মসজিদের দুটি মিনার নির্মাণ করেন এবং পরে মসজিদের চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
মসজিদের দেয়ালের নকশা করা। শুধু নকশাই নয়, মসজিদের দেয়ালে খেজুরের কাঠ এমনভাবে লাগানো হয়েছে যাতে মাটির দেয়াল সহজে ভেঙে না পড়ে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে শতাধিক ছোট ছোট মিনারের মতো স্থাপনা। প্রতি বছর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। এমনকি গরমের দিনেও মসজিদের ভেতরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। ১৯৮৮ সালে, ইউনেস্কো এই মসজিদটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করে।
মসজিদের দেয়াল ও ছাদের বোঝা বহনের জন্য ৯০টি শক্ত কাঠের কলাম ব্যবহার করা হয়। মসজিদের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য ছাদে ও দেয়ালে একাধিক জানালা বসানো হয়েছে। যদিও সমস্যা হয় বর্ষা মৌসুমে। এ সময় বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়াল ও ছাদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডিজেনির বাসিন্দারা মসজিদের সংস্কারে অংশগ্রহণ করাকে গর্বের বিষয় বলে মনে করেন।
সফরের টার্গেট যদি মালি হয় তাহলে দেখে আসতে পারেন অনেক বছরের ঐতিহ্যে লালিত এই মসজিদটি।