March 9, 2025
পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতিহাসের ভয়াবহ অভিযান: নাবলুসের মসজিদে মসজিদে হামলা-অগ্নিসংযোগ

পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতিহাসের ভয়াবহ অভিযান: নাবলুসের মসজিদে মসজিদে হামলা-অগ্নিসংযোগ

পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতিহাসের ভয়াবহ অভিযান: নাবলুসের মসজিদে মসজিদে হামলা-অগ্নিসংযোগ

পশ্চিম তীরে ইসরায়েল ইতিহাসের ভয়াবহ অভিযান: নাবলুসের মসজিদে মসজিদে হামলা-অগ্নিসংযোগ

পশ্চিম তীর:

পশ্চিম তীর, জর্ডান নদীর পশ্চিমে এবং জেরুজালেমের পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চল। আয়তন: ৫,৬৬০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা: ৪,০২৬,০০০ এর বেশি।পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনের একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ব অংশ। এই অঞ্চলটি জর্ডানের অংশ ছিল। ১৯৬৭ সালে  ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল এটি দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘ চুক্তির শর্তাধীনে এটি ফিলিস্তিনের অংশ হয়ে ওঠে। এটি এখন মূলত জোরপূর্বক  ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে। এর  জনবহুল অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে নাবলুস, হেব্রন, বেথলেহেম এবং জেরিকো।

ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরটিতে বেশ কয়েকটি মসজিদে হামলা চালিয়ে ঐতিহাসিক আল-নাসর মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে এই হামলা চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফার বরাত দিয়ে আনাদোলু জানিয়েছে যে, বর্বর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি বিশাল দল নাবলুসের বেশ কয়েকটি মসজিদে হামলা চালিয়ে তাদের ভেতরের অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে।

সংবাদ সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, সেই সময় ইসরায়েলি সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঐতিহাসিক আল-নাসর মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকি তারা অগ্নিনির্বাপকদের আগুন নেভাতেও বাধা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আনাদোলুকে জানিয়েছেন যে, আগুনে ইমামের কক্ষ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায় এবং মসজিদের দেয়াল এবং কার্পেট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এটি লক্ষণীয় যে, ঐতিহাসিক আল-নাসর মসজিদ নাবলুসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন। ইসরাইল দাবি করে থাকে যে,  এটি মূলত রোমান যুগে একটি গির্জা ছিল। এটি ১১৮৭ সালে মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল। ফিলিস্তিনের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ এবং মসজিদে অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “আজ সকালে ইসরায়েলি বাহিনী পুরাতন শহরের বাব আল-সাহা এলাকার আল-নাসর মসজিদে আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং নাবলুস পৌরসভার অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের আগুন নেভাতে বাধা দেয়, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে।”

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি বাহিনী কোনও পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই পুরাতন শহরের বেশ কয়েকটি মসজিদে আক্রমণ করে এবং মসজিদের অভ্যন্তরভাগ অপবিত্র করে।

নাবলুস এনডাউমেন্টসের পরিচালক নাসের আল-সালমান এই আক্রমণকে “একটি নৃশংস ইসরায়েলি আগ্রাসন” বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, “১৯৪৮ সালের নাকবা (ফিলিস্তিনি বিপর্যয়) এর পর থেকে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ইসরায়েল ধর্মীয়, নৈতিক এবং আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিবিধানকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করছে যা উপাসনা এবং পবিত্র স্থানগুলিতে প্রবেশাধিকারের অধিকার নিশ্চিত করে।”

নাসের আল-সালমান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং আইনি সংস্থাগুলিকে এই ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংসের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের কারণে অধিকৃত পশ্চিম তীর জুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরায়েলি বাহিনী এবং সেখানে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণে কমপক্ষে ৯৩০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৭,০০০ আহত হয়েছে।

জুলাইয়ের শুরুতে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী দখলকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম থেকে সমস্ত বসতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।

পশ্চিম তীরে ইসরায়েল রেকর্ড করা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযান চালাচ্ছে

UNRWA কমিশনার-জেনারেল বলেছেন যে অধিকৃত পশ্চিম তীরে শরণার্থী শিবির ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলের অভিযান ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতি ঘটাচ্ছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা (UNRWA) কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ লাজ্জারিনি শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছেন।

পশ্চিম তীরে শরণার্থী শিবিরের পরিকল্পিত এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের অভূতপূর্ব প্রভাব পড়ছে। এটি জেনিন, তুলকার্ম এবং নুর শামস শরণার্থী শিবিরের বেশিরভাগ বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং ঘরবাড়ি সহ বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।

সেখানকার মানুষ এখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে যেখানে তারা আর ফিরে যাওয়ার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর এই অভিযানটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং ধ্বংসাত্মক। এর ফলে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরে সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে।

ইউএনআরডব্লিউএ কমিশনার-জেনারেলের মতে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর এই ভয়াবহ অভিযানে প্রায় ৪০,০০০ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে, জাতিসংঘ পশ্চিম তীরের পরিস্থিতিকে “গভীর উদ্বেগজনক” বলে বর্ণনা করেছে। শুক্রবার তুরস্কের আনাদোলু সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুসারে, জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি-অধিকৃত পশ্চিম তীরের পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন,  আমাদের মানবিক অংশীদাররা, বিশেষ করে পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলে, সতর্ক করছেন যে, পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগজনক।

আরো জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X