সেহরি খাওয়ার সময় যেসব বিষয় মেনে চলা উত্তম
পূর্ণাঙ্গ একমাস সকল মুসলমান একসাথে ভোররাতে উঠে খাবার খাওয়ার এই আনন্দ রমজান মাসের সেহরি ছাড়া সম্ভব নয়। এবং এই আনন্দদায়ক আমলটি একমাত্র ইসলামী সমাজেই বিরাজমান। ইফতারের বেলায়ও ঠিক তাই। সুতরাং সেহরির খাবার অবশ্যই মানসম্পন্ন হতে হবে। যেহেতু সেহরি খাওয়ার পরে লম্বা একটা সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুসারীদের বিভিন্ন বাণীর মাধ্যমে সেহরি খাওয়ার ফজিলত এবং উপকারিতা তুলে ধরেছেন এবং উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন,
“সেহরি খাও। কারণ সেহরিতেই বরকত রয়েছে।” “সেহরি খাওয়ার অভ্যাস করো। কারণ সেহরি একটি বরকতময় খাবার।” (সহীহ বুখারী, মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ,নাসাঈ)।
নবী (সা.) আরও বলেন, ‘‘আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের) রোযার মাঝে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া।’’
(সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ)
রোজার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সেহরি এবং ইফতার। রোজাদারের জন্য সেহরি খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারাদিনের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য সেহরি খাবারের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই, সেহরি খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকা উচিত।
নিয়ম না মেনে উচ্চমাত্রার চর্বি ও তেলযুক্ত খাবার খেয়ে রোজা রাখলে শরীর ইতিমধ্যেই ক্লান্ত এবং অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই, রোজার সময় সুস্থ থাকার জন্য, ইফতারের সাথে সাথে সেহরি খাবারের তালিকায় বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর সেহরি না খেলে যেসব সমস্যা দেখা দেয়:
- পেট ব্যথা, অ্যাসিডিটি, বমি বমি ভাব
- হজমের সমস্যা
- মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা
- পানিশূন্যতা
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- মনোযোগের অভাব, শক্তি হ্রাস
- মেজাজের ভারসম্মতার অভাব হয়।
- ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি
তাহলে সেহরি খাবার কেমন হবে?
তরল খাবার:
সেহরি খাবারে স্বাদের চেয়ে খাবারের মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিন। সেহরিতে বেশি তরল খাবার খান। যেমন: লেবু, কমলা, শসা, তরমুজ, জল ইত্যাদি। রোজার দিনগুলিতে শরীরের পানিশূন্যতা কমাতে পর্যাপ্ত পানি এবং জলীয় খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পানি পান করুন:
সেহরিতে কমপক্ষে এক লিটার পানি পান করুন, তবে একেবারে এক সাথে নয় গ্যাপ দিয়ে দু’ তিন বাড়ে পান করবেন । এই পানি শরীর থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করবে এবং ক্ষুধার চাহিদা অনেকাংশে কমিয়ে দেবে।
মানসম্পন্ন কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার:
মানসম্পন্ন কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার। লাল ভাত বা বাদামী চাল, ওটস, লাল আটার রুটি, ডাল বা মুগ ডাল। এই খাবারগুলি ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে এবং ক্ষুধার অনুভূতি কমায়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার:
প্রোটিন শরীরের টিস্যু মেরামত করে এবং শক্তি বজায় রাখে।যেমন হালকা মসলায় রান্না করা মাংস,সেদ্ধ ডিম, অমলেট, মুরগির মাংস, দই, মাছ, ছোট মাছ ,সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি রাখতে পারেন।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি, ফল, খোসা ছাড়া ছোলা এবং মুগ ডাল। এই খাবারগুলি ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে ক্ষুধার ভাব দেরিতে আসে ।
সেহরিতে যা যা খাবেননা:
- সেহরিতে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এই জাতীয় খাবার শরীরের তাপ বাড়ায়। সেহরিতে খুব বেশি ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো।
- এই সময়ে শুকনো এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার খাবেন না। এই ধরনের খাবার শরীরকে পানিশূন্য করে।
- সেহরিতে চা বা কফি পান করা এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করুন। এগুলো পানিশূন্যতা বাড়ায়।
- কখনও সেহরির খাবার এড়িয়ে যাবেন না। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। সারাদিন শরীরে শক্তি বজায় রাখার জন্য সেহরিতে খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- এ ছাড়া পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করে এমন খাবার এড়িয়ে চলুন।
- এই সময়ে লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। আচার, মশলাদার খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভারী মিষ্টি, কোমল পানীয় ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
- ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- প্যাকেজ করা খাবার, লবণাক্ত খাবার, আচার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, হিমায়িত খাবার, টিনজাত স্যুপ, ড্রেসিং, সস, স্ন্যাকস সেহরিতে খাওয়া ভালো।
- সেহরির সময় মিষ্টি খাবার বদহজমের কারণ হয়। তাই, এই সময় মিষ্টি খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- কোল্ড ড্রিঙ্কস অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া, কোল্ড ড্রিঙ্কস শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। তাই, সেহরি খাওয়ার পর কখনই কোমল পানীয় খাওয়া উচিত নয়।
- সেহরির সময় ফাস্ট ফুড গ্যাসের কারণ হয়। তাই, ফাস্ট ফুড খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
সেহরিতে সঠিক খাবার খাওয়া রোজা রাখা অনেক সহজ করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। অতএব, সেহরিতে সঠিক খাবার নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।