চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন আয়োজনে ফাগুন উৎসব শিরোনামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো পিঠা উৎসব ও ফাল্গুনী সন্ধ্যা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে্র সানাই পার্টি হলের বসন্তের রঙে রাঙানো এ আয়োজন ছিল শুধুই একটা অনুষ্ঠান নয়; ছিলো প্রাণের উচ্ছ্বাস, স্মৃতির মেলা, আর সংস্কৃতির গভীর এক বন্ধন। প্রবাসে থেকেও বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আর উষ্ণ বন্ধনের আনন্দ যেন এক মুহূর্তের জন্যও হারিয়ে যায়নি, তারই বহি:প্রকাশ পেলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, উত্তর আমেরিকা-র এবারের আয়োজনে।
বাহারি রঙের পোশাকে সেজে আসা অতিথিরা যেন প্রকৃতির এই ঋতুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। বাঙালির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পিঠা ছিল সন্ধ্যার অন্যতম মূল আকর্ষণ। নানা স্বাদের ঐতিহ্যবাহী পিঠা পরিবেশন করা হয়, যা অতিথিদের মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা শৈশব, শীতের সন্ধ্যা, আর গ্রামের উঠোনে বসে পিঠা খাওয়ার সুখ স্মৃতি। দীর্ঘদিন পর পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ, হাসি-আনন্দ—সব মিলিয়ে এটি এক আবেগঘন মিলনমেলায় পরিণত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, উত্তর আমেরিকা-র সাধারণ সম্পাদক মীর কাদের রাসেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে ফাগুনের শুভেচ্ছা বিনিময় ও অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি: জনাব পারভেজ কাজী, উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি জনাব আবদুল আজিজ নঈমী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অ্যালামনাই সদস্য বিজন পাল। আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— আহবায়ক অনুপ দাশ, সদস্য সচিব ফারহানা আক্তার, চিফ কো-অর্ডিনেটর ত্রিদিব চৌধুরী, সভাপতি সাবিনা শারমিন নিহার।
সংগীত, নৃত্য ও কবিতার অপূর্ব সংমিশ্রণে সাজানো হয় অনবদ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। পরীমনির নৃত্য পরিবেশনা আগত অতিথিদের মুগ্ধ করে আর পিংকি চৌধুরী আবৃত্তি সবাইকে নিয়ে যায় এক অন্যরকম অনুভূতির জগতে। রূপাই রুদ্র নীল, সুপ্রিয়া চৌধুরী ও কোরাস দল, দেবদাস চৌধুরী এবং বাংলাদেশের এই প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়ক স্বপ্নীল সজীবের সংগীত পরিবেশনা উপভোগ করেন সবাই। তাদের সুরেলা কণ্ঠ আর সুরের মূর্ছনায় সন্ধ্যার মোহ আরও গাঢ় হয়ে ওঠে। প্রাণখোলা আড্ডা, গান, কবিতা, এবং নৃত্যের মাধ্যমে সন্ধ্যাটি হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি এই উৎসবের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে তোলে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের – সভাপতি জনাব এস এম আলম, সাধারণ সম্পাদক জনাব রুহল সরকার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি জনাব সৈয়দ মিজানুর রহমান, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আহসান হাবীব।
এছাড়াও, সংগঠনের উপদেষ্টা, কার্যকরী কমিটির সদস্য ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এই সন্ধ্যার আনন্দ ভাগ করে নেন। উৎসবের শেষ ভাগে অতিথিদের জন্য আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী নৈশভোজের। সুস্বাদু খাবারের সুবাস, আড্ডার রেশ, আর বসন্তের উচ্ছ্বাসে সন্ধ্যার পর্দা নামে, তবে থেকে যায় একগুচ্ছ মধুর স্মৃতি।
এই উৎসব শুধু বসন্তকে বরণ করে নেওয়ারই ছিল না, এটি ছিল বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার এক প্রয়াস। প্রবাসেও যে বাঙালি তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আর মাটির টান ভুলে যায়নি, সেটিই এই আয়োজন প্রমাণ করল। এই ভালোবাসা, ঐতিহ্য আর বন্ধনের স্মৃতি চিরকাল অমলিন থাকুক—এই প্রত্যাশায় আবারও এমন আয়োজনের অপেক্ষায় থাকল সবাই।