প্রযুক্তির অতি-ব্যবহারে শুষ্ক চোখ
আল্লাহর দেওয়া মানুষের জন্য বড় নেয়ামতের একটি হলো মানুষের চোখ কিন্তুআধুনিক যুগে ডিজিটাল ডিভাইসের অত্যধিক ব্যবহার আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার এবং টেলিভিশনের স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে শুষ্ক চোখের প্রবণতা বেড়েছে। “শুষ্ক চোখের সিন্ড্রোম” বা “ডিজিটাল চোখের চাপ” নামে পরিচিত এই সমস্যাটি এখন ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে।
স্ক্রিন টাইম কীভাবে চোখকে প্রভাবিত করে:
স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে আমাদের কম পলক পড়ে। পলক ফেলা চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি চোখের উপর পানির একটি স্তর ছড়িয়ে দেয় যা চোখকে আর্দ্র রাখে এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে রক্ষা করে। কম পলক ফেলার কারণে, চোখে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে চোখ শুষ্ক হতে পারে।
শুষ্ক চোখ কী:
যখন চোখে প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি তৈরি হয়, তখন জ্বালাপোড়া, দংশন বা চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো শুষ্ক চোখের প্রাথমিক লক্ষণ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে, চোখে প্রদাহজনিত সমস্যা সহ বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। একই সাথে, উভয় চোখে বা এক চোখে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শুষ্ক চোখ সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরে দেখা যায়। কিন্তু এখন তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা, লেন্স ব্যবহার করা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকা এবং ধূমপানের কারণে এটি হয়।
ডিজিটাল ডিভাইসের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে শুষ্ক চোখের কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- কাঁদতে না পারা,
- চুলকানি এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়া,
- ঝাপসা দৃষ্টি,
- চোখ থেকে ক্রমাগত পানি পড়া,
- আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা,
- সবসময় চোখে কিছু পড়েছে বলে মনে হওয়া,
- চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে,
- চোখ খুব ক্লান্ত বোধ হতে পারে,
- চোখে শুষ্কতা এবং জ্বালা
- চোখে বালি বা কাঁটার অনুভূতি,
- চোখ লাল,
- ঘাড় ,কাঁধ এবং মাথা ব্যথা।
যদি এমন সমস্যা অতিমাত্রায় দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
চোখের শুষ্কতা এবং জ্বালা কমাতে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে;
২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করুন:
প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য মিনিমাম ২০ ফুট দূরে তাকান। এটি চোখের পাতা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং চোখের শুষ্কতা কমায়।
বেশি করে পলক ফেলুন:
স্ক্রিনের সামনে কম পলক ফেললে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, তাই আরও পলক ফেলার চেষ্টা করুন।
হাইড্রেটেড থাকুন:
পর্যাপ্ত পানি পান করুন, অর্থাৎ প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা উচিত।
স্ক্রিনের উচ্চতা এবং অবস্থান সঠিক রাখুন:
স্ক্রিনটি চোখের স্তরের নীচে রাখুন এবং প্রতিফলিত আলো এড়াতে স্ক্রিনের অবস্থান সামঞ্জস্য করুন।
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা এবং নীল আলো ফিল্টার:
স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা এবং নীল আলোর ফিল্টার ব্যবহার করে চোখের চাপ কমান
এর পাশাপাশি যা করবেন;
- শুষ্ক চোখের সমস্যা থাকলে, প্রথমেই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ এবং ড্রপ বা ঔষধ ব্যবহার করুন। নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে এই সমস্যা কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যাবে।
- কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন না।
- যদি কাজ করতে চান, তাহলে স্ক্রিনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি চশমা দিয়ে চশমা বানান।
- বেশি করে পানিযুক্ত ফল এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
- বেশিক্ষণ এক জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না।
- ঘন ঘন চোখ বুলিয়ে নিন। এসির বাতাস যেন চোখে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- খুব অস্বস্তিকর না হলে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে না থাকাই ভালো।
- বেশি করে সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার অয়েল, আখরোট বা বিভিন্ন ধরণের মিশ্র বাদাম, টক দই এবং সয়া দুধ খান।
- ধূমপান, অ্যালকোহল বা অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলা উচিত।
যদি উপরের পদ্ধতিগুলি কার্যকর না হয় এবং শুষ্ক চোখ অব্যাহত থাকে, তাহলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ চোখের সমস্যা কতটা গুরুতর এবং কী ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে তা নির্ধারণ করতে পারেন।