হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর জানাযায় মানুষের ঢল, উপস্থিত ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতিসহ বিশ্ব নেতাগণ
লেবাননের দেশপ্রেমিক দল হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহর জানাজা রবিবার অনুষ্ঠিত হয়, ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পাঁচ মাস পর শ্রদ্ধা জানাতে বৈরুতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর জানাযায় যোগ দিতে রাজধানী বৈরুতে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং প্রভাবশালী কর্মীদের একটি বিশাল দল জড়ো হয়েছেন। তাদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব নেতাগণ।
ইসরায়েলের সাথে কয়েক দশকের সংঘাতের মধ্য দিয়ে নাসরুল্লাহ শিয়া মুসলিম গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং এটিকে একটি আঞ্চলিক সামরিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিলেন।
রবিবার ভোরে বৈরুতের হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ শহরতলির একটি স্টেডিয়ামে নাসরুল্লাহ এবং অন্যান্য নিহত নেতাদের গণ-জানাজায় সমর্থকরা জড়ো হয়েছিল। তাদের হাতে নাসরুল্লাহ এবং হিজবুল্লাহর পতাকার ছবি দেখা গেছে। গত বছরের ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ নেতৃত্ব এবং হাজার হাজার যোদ্ধা নিহত হওয়ার পর গণ-জানাজা ছিল শক্তি প্রদর্শন পূর্বক ভালোবাসার নিদর্শন।
এসময়ে সময়ে হাশেম সাফিউদ্দিনের জানাজাও অনুষ্ঠিত হয়। নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর এক সপ্তাহ কাল হাশেম হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দেন। নাসরুল্লাহর উত্তরসূরি হিসেবে তাকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করার আগেই ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন। তার শাহাদাতের পর, নাসরুল্লাহকে তার ছেলে হাদির পাশে সাময়িকভাবে সমাহিত করা হয়। ১৯৯৭ সালে হিজবুল্লাহর হয়ে লড়াই করে হাদি শহীদ হন। মার্কিন সমর্থিত যুদ্ধবিরতির শর্তে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের কারণে নাসরাল্লাহর আনুষ্ঠানিক জানাজা বিলম্বিত হয়।
এদিকে, আল জাজিরা জানিয়েছে যে, পাঁচ মাস আগে ইসরায়েল নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে তার জনসাধারণের জানাজা বিলম্বিত হয়েছে। এই কারণেই হাসান নাসরাল্লাহর জানাজা পাঁচ মাস পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে
গত বছরের ২৭শে সেপ্টেম্বর বৈরুতের উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পাঁচ মাস পর হিজবুল্লাহর প্রাক্তন প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০২৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। তিনি ৩২ বছর ধরে সংগঠনের প্রধান ছিলেন।
তার মৃত্যুর চার মাস পর, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীর বর্তমান প্রধান নাইম কাসেম বলেছেন, “২৩শে ফেব্রুয়ারি বৈরুতের উপকণ্ঠে হাসান নাসরাল্লাহকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।”
একটি টেলিভিশন ভাষণে নাইম কাসেম বলেন, “নাসরাল্লাহকে এমন এক সময়ে হত্যা করা হয়েছিল যখন পরিস্থিতি কঠিন ছিল। সেই কারণেই ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুসারে, হাসান নাসরাল্লাহকে সাময়িকভাবে একটি গোপন স্থানে রাখা হয়েছিল।”
হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন যে, হাসান নাসরাল্লাহ এবং আরেক শীর্ষ নেতা হাশেম সাফিউদ্দিনের জন্য একটি বিশাল জনসাধারণের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, নাসরাল্লাহকে বৈরুতের উপকণ্ঠে নিউ এয়ারপোর্ট রোডে আমাদের পছন্দের একটি স্থানে সমাহিত করা হবে। অন্যদিকে, সাফিউদ্দিনকে দক্ষিণ লেবাননের দেইর কানুনে তার জন্মস্থানে সমাহিত করা হবে।
ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধের মধ্যে, ২৯শে অক্টোবর নাইম কাসেম হিজবুল্লাহর মহাসচিব নির্বাচিত হন। নভেম্বরের শেষের দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
চুক্তি অনুসারে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের দক্ষিণ লেবানন ত্যাগ করতে হবে এবং ইসরায়েলি সেনাদেরও ধীরে ধীরে লেবানন থেকে প্রত্যাহার করা হবে। যদিও প্রাথমিকভাবে যুদ্ধবিরতির সময়কাল ৬০ দিনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু ২৭ জানুয়ারী আবার যুদ্ধবিরতির সময়কাল ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
