কুম্ভমেলা ঘিরে দিল্লি রেলস্টেশনে ভীড়ে পদদলিত, ১৫ জন মহিলা ও শিশু সহ ১৮ জন নিহত
কুম্ভমেলা
প্রচলিত বিশ্বাস হলো, মহাকুম্ভমেলায় গিয়ে নদীর নির্দিষ্ট সঙ্গমে স্নান করলে ‘মোক্ষ’ লাভ করা যায়। অমৃত কুম্ভে স্নান করলে জীবনের সমস্ত পাপ, দুঃখ, দুঃখ ধুয়ে যায়। পরকালে স্বর্গ লাভ হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, প্রয়াগরাজের ত্রিবেণী সঙ্গমে এই বিশ্বাস ঘুরপাক খাচ্ছে। এবার বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের উৎসাহ ও উত্তেজনায় এতে যোগ দিয়েছেন। সেই কারণেই লক্ষ লক্ষ ভক্ত অমৃত স্নানের জন্য মহাকুম্ভমেলায় সমবেত হন।
সে ধারণামতে, কুম্ভমেলা হিন্দুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রা, যা প্রতি ৬, ১২ এবং ১৪৪ বছরে একবার উদযাপিত হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ হিসাবেও পরিচিত। নদীতে পবিত্র স্নানের মাধ্যমে কুম্ভমেলা উদযাপিত হয়। তবে, এটি কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি সম্প্রদায়ের বাণিজ্য, মেলা, শিক্ষা, সাধুদের ধর্মীয় বক্তৃতা, সন্ন্যাসীদের সমাবেশ এবং বিনোদনের একটি সমাবেশও।
মেলাটি চারটি তীর্থস্থানে অনুষ্ঠিত হয়:
১. প্রয়াগরাজ=যেখানে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মিলনস্থল,
২. হরিদ্বার=গঙ্গা নদী,
৩. নাসিক=গোদাবরী নদী এবং
৪. উজ্জয়িনী=শিপ্রা নদী।
২০২২ সালে, হুগলির বাঁশবেড়িয়া ৭০০ বছর পর আবার কুম্ভমেলা আয়োজন করেছিল।
তীর্থযাত্রীরা বিশ্বাস করেন যে, এই নদীগুলিতে স্নান করা তাদের পূর্বের পাপের প্রায়শ্চিত্ত এবং পবিত্রতার একটি উপায়, যা তাদের পাপ থেকে শুদ্ধ করে।
কুম্ভমেলাগুলিকে নিম্নরূপ শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
- পূর্ণ কুম্ভমেলা ( কুম্ভ বা “পূর্ণ কুম্ভ” বলা হয়), প্রতি ১২ বছর অন্তর একটি নির্দিষ্ট স্থানে অনুষ্ঠিত হয়।
- অর্ধ কুম্ভমেলা (“অর্ধ কুম্ভ”) প্রয়াগরাজ এবং হরিদ্বারে দুটি পূর্ণ কুম্ভমেলার মধ্যে প্রায় প্রতি ৬ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়।
- মহা কুম্ভমেলা, (যা প্রতি ১২ পূর্ণ কুম্ভমেলায়, অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছরে) অনুষ্ঠিত হয়।
মেলা বা অনুষ্ঠান কেন্দ্রিক মৃত্যুর ঘটনায় ভারত সারা দুনিয়ায় শীর্ষে রয়েছে। ভারতের রাজধানীর নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ১৮ জন মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে পনেরো জন নারী ও শিশু। আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে যে, কুম্ভমেলায় উপস্থিত তীর্থযাত্রীদের ভিড়ের কারণে দিল্লি রেলস্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যার ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
দেশের কুম্ভমেলায় আগত তীর্থযাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে দিল্লি রেলস্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং হতাহতের ঘটনা ঘটে। রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এই তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে যে, শনিবার রাতে নতুন দিল্লি রেলস্টেশনে মহাকুম্ভের জন্য নির্ধারিত দুটি ট্রেন বিলম্বিত হওয়ার কারণে যাত্রীদের মধ্যে হঠাৎ করেই হুড়োহুড়ি ও পদদলিত হয় এবং ১১ জন নারী ও চার শিশুসহ কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের প্রধান দুর্ঘটনাজনিত চিকিৎসা কর্মকর্তা হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, এই ঘটনায় ১০ জন নারী, তিনজন শিশু এবং দুইজন পুরুষ নিহত হয়েছেন। লেডি হার্ডিঞ্জ হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় রেলওয়ে এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা এবং সামান্য আহতদের জন্য ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।
প্রাথমিকভাবে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরে দিল্লি পুলিশ ১৮ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম রেলওয়ে সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুম্ভমেলা তীর্থযাত্রীদের ভিড় ছিল। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন যে ট্রেন দুটি প্ল্যাটফর্মে দেরিতে আসছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন যে দুটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ফলে ভিড়ের মধ্যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। অনেকেই দাবি করেছেন যে, দুটি প্ল্যাটফর্মে পদদলিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও ভারতীয় রেলওয়ে দাবি করেছে যে, এগুলি সবই গুজব।
এই ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “পদদলিত হয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে।”
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন। এছাড়াও, দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর এক্স তার হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “দিল্লি স্টেশনে পদদলিত হওয়ায় নিহত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা। মুখ্য সচিব এবং পুলিশ কমিশনারকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে, উত্তর রেলওয়ের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেছেন যে, নতুন দিল্লি স্টেশনে কোনও পদদলিত হয়নি। তিনি বলেছেন যে, গুজব ছড়ানোর কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রেল কর্মকর্তা বলেছেন যে, প্রয়াগরাজের উদ্দেশ্যে দুটি বিশেষ ট্রেন চালানো হচ্ছে।
এদিকে, ভারতীয় রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, রেলওয়ে পুলিশ এবং দিল্লি পুলিশের একটি দল নতুন দিল্লি স্টেশনে পৌঁছেছে। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভিড়ের মধ্যে আটকে পড়া আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রেলওয়ে পুলিশের ডিসি বলেন, “প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় স্টেশনে প্রচুর ভিড় ছিল। স্বাধীন সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস দেরিতে এসেছিল। তাই ওই দুটি ট্রেনের যাত্রীরাও ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। “জানা গেছে যে ১,৫০০টি সাধারণ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। সেই কারণেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।”