March 12, 2025
অবশেষে একুশে পদক পাচ্ছেন প্রচার বিমুখ ব্যক্তি অভ্র কিবোর্ডের কারিগর ডাঃ মেহদী হাসানসহ ৪ জন

অবশেষে একুশে পদক পাচ্ছেন প্রচার বিমুখ ব্যক্তি অভ্র কিবোর্ডের কারিগর ডাঃ মেহদী হাসানসহ ৪ জন

অবশেষে একুশে পদক পাচ্ছেন প্রচার বিমুখ ব্যক্তি অভ্র কিবোর্ডের কারিগর ডাঃ মেহদী হাসানসহ ৪ জন

অবশেষে একুশে পদক পাচ্ছেন প্রচার বিমুখ ব্যক্তি অভ্র কিবোর্ডের কারিগর ডাঃ মেহদী হাসানসহ ৪ জন

একুশে পদক

“বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক। ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক, ভাষাবিদ, লেখক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিজ্ঞানী , আবিষ্কারক , সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানকারী, সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং প্রতিষ্ঠান এবং এজাতীয় বক্তিদেরকে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক প্রদান করা হয়ে আসছে। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে একুশে পদক প্রবর্তন করেন।”

ভাষা উন্মুক্ত হোক’ এই স্লোগান দিয়ে অভ্র কীবোর্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর কারিগর হলেন ডঃ মেহেদী হাসান। তিনি ১৯৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। মেহেদী হাসান খানের জন্ম ১৯৮৯ সালের ২৩ জুলাই। তিনি ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি ২০০৩ সালে ইউনিকোড এবং এএনএসআই সাপোর্ট সহ বাংলা লেখার জন্য একটি বিনামূল্যের এবং উন্মুক্ত সফটওয়্যার অভ্র কীবোর্ড তৈরি করেন।

মজার বিষয় হলো, গুগল উইকিপিডিয়ায় সর্বত্র অনুসন্ধান করার পরেও তার কোনও ছবি পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে তার একটি ছবি পাওয়া যায়।  কত প্রচার-বিমুখ  ব্যক্তি তিনি , তিনি চাইলে অভ্রের সাথে তার ছবি যোগ করে লিখতে পারতেন, ‘ভাষা উন্মুক্ত হোক, ডঃ মেহেদী হাসান।’ তিনি চাইলে এই সফটওয়্যার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করতে পারতেন। তিনি কোনটিই করেননি। ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদরা যেমন আমাদের বুকের তাজা রক্ত ​​দিয়ে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি এই মানুষটিও কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনে বাংলা লেখার অধিকার দিয়েছেন। আজ আমাদের গ্রামের একজন বধির ছেলেও বাংলা লিখতে পারে। আজ যার সাথে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলতে হয়, সেও ফেসবুকে বাংলায় স্ট্যাটাস দেয়। এ সবই মেহেদী হাসান খানের অবদান।

এই সৃষ্টির পেছনে তার দুই সহকারী রয়েছেন, তাদের নাম রিফাত নবী এবং তানবীর ইসলাম সিয়াম। গুগল থেকেও তাদের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।

আমাদের এই দেশে ডক্টর মেহেদীর মতো লোকের প্রয়োজন। সহজে বাংলায় লেখার জন্য জনপ্রিয় সফটওয়্যার হলো ‘অভ্র কিবোর্ড’। আর এর আবিষ্কারক মেহেদী হাসান খান নামে একজন ডাক্তার। তার আবিষ্কারের ফলে, ছোট-বড় ​​সবাই, প্রায়শই খুব সহজেই বাংলায় লিখতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তার এই অবিস্মরণীয় অবদান নিয়ে আলোচনা হলেও, এটি স্বীকৃতি পায়নি। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। অবশেষে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে তিনি একুশে পদক পেতে চলেছেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একুশে পদক পুরস্কার নিশ্চিত করেন।

ছোটবেলা থেকেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। ২০০৩ সালের বইমেলায় BIOS নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রদর্শনী দেখে মেহেদী হাসান অনুপ্রাণিত হন। তখনই তার মাথায় একটি সহজ বাংলা লেখার সফটওয়্যার তৈরির ধারণা আসে।

প্রাথমিকভাবে, যেহেতু ইউনিকোড-ভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য উপযুক্ত কোনও সফটওয়্যার ছিল না, তাই তিনি নিজেই একটি সমাধান তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে, তিনি Microsoft.NET ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। অবশেষে, তিনি ক্লাসিক ভিজ্যুয়াল বেসিকের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করেছিলেন, যা বাংলা লেখার জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।

২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ প্রথমবারের মতো অভ্র কীবোর্ড উন্মোচন করা হয়। পরবর্তীতে, ওমিক্রনল্যাব এটি ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০০৩ সালে প্রকাশ করে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য অভ্র ব্যবহার করেছে।

অভ্র সফটওয়্যার কম্পিউটারে বাংলা লেখা সহজ করে তুলেছে। ফলস্বরূপ, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সকলেই এটি ব্যবহার শুরু করেছে। অভ্রের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল এর ওপেন সোর্স প্রকৃতি এবং কাস্টম লেআউট সুবিধা।

অভ্র দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন রিফাত উন নবী, সিয়াম রূপালী ফন্টের জনক সিয়াম, সারিম, ভারতের নিপন এবং মেহেদীর স্ত্রী সুমাইয়া নাজমুন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে অভ্র তার বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে।

উল্লেখ্য যে, অভ্র কীবোর্ডের জন্য মেহেদী হাসান খান ২০১১ সালে তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য বেসিস পুরস্কার পেয়েছিলেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পোস্টে তিনি বলেন, আমরা জানতাম মেহদী হাসান খান পুরস্কার গ্রহণ করতে আগ্রহী না। এর আগেও তাকে প্রস্তাব করা হয়েছিলো। তিনি পুরস্কার না নিতে পারেন জেনেও আমাদের ক্যাবিনেট থেকে আমরা পুরস্কার ঘোষণা করতে সম্মত হই। এর মাধ্যমে আমরা বার্তা দিতে চেয়েছি আমরা কাদের সম্মানিত করবো।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও লেখেন, কালকে (শনিবার) তার সাথে যখন কথা হয়, তিনি তখন অসম্মতই ছিলেন। ফাইনালি তিনি পুরস্কার নিতে সম্মত হন। কিন্তু তিনি একা এই কৃতিত্ব নিতে চাননি। তার আরও তিন বন্ধু- রিফাত নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম এবং শাবাব মুস্তাফা- যারাও অভ্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তাদের ছাড়া তিনি পুরস্কার নিতে চাননি। আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়া এই চার গুণীকেই অভ্র’র জন্য দলগতভাবে একুশে পদকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মেহেদী হাসানসহ তারা চার বন্ধুই পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে পুরস্কার গ্রহণ করতে আসছেন বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা।

আরো পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X