নিকাব নিষিদ্ধ করল মুসলিম দেশ কিরগিজস্তান
নিকাব:
‘মুখ সহকারে শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখাকে নিকাব বলা হয় সেখানে ইচ্ছা করলে শুধুমাত্র চক্ষু, হাতের কব্জি, পায়ের পাতা খোলা রাখা যেতে পারে।’
হিজাব:
‘যেখানে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে মুখটা খোলা রাখা হয় এবং সেখানে চেহারাটা পুরোপুরি বুঝা যায় তাকে হিজাব বলা হয়।‘
কিরগিজ পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত একটি নতুন আইন অনুসারে, প্রকাশ্য স্থানে নেকাব পরলে প্রায় ২৩০ মার্কিন ডলার (১২০ টাকা বা ২৭,৬০০ বাংলাদেশি টাকা) জরিমানা করা হবে।
এক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দেশটির আইনপ্রণেতারা বলেছেন যে, নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, নিকাব নিষিদ্ধ করল এক মুসলিম দেশ কিরগিজস্তান পরলে মুখ সম্পূর্ণরূপে ঢেকে যায়, যার ফলে প্রকাশ্য স্থানে কোনও ব্যক্তিকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণে, দেশটির সরকার চায় সকলের মুখ জনসমক্ষে দৃশ্যমান হোক এবং সহজেই শনাক্ত করা যায়।
দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার নুরলানবেক শাকিয়েভ বলেছেন যে, আইনটি কিরগিজ সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। তবে, নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র নিকাবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হিজাব বা মাথার স্কার্ফ পরা অনুমোদিত, কারণ এটি মুখ ঢেকে রাখেনা।
স্পিকার শাকিয়েভ বলেন, “আমাদের মা ও বোনেরা ঐতিহ্যগতভাবে নিকাব পরেন, যা আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের অংশ। তাই, হিজাবের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।”
প্রতিক্রিয়া
দেশের বিভিন্ন মহল থেকে এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করা হয়েছে। বিরোধীদের মতে, এই সিদ্ধান্ত মহিলাদের পোশাকের ক্ষেত্রে পছন্দের স্বাধীনতা খর্ব করে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে সরকারের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ।
একজন নারী অধিকার কর্মী বলেছেন যে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে মহিলাদের তাদের ইচ্ছামত পোশাক পরার অধিকার থাকা উচিত। এই নিষেধাজ্ঞা সেই স্বাধীনতার উপর আক্রমণ।
একজন নিকাব পরা মহিলা, যিনি ছয় বছর আগে বিয়ের পর তার স্বামীর অনুরোধে নিকাব পরা শুরু করেছিলেন, তিনি বলেন, “নিষেধাজ্ঞার কারণে আমি ঘর থেকে বের হতে ভয় পাই। যখন আমি বাইরে যাই, তখন মুখ ঢেকে রাখার জন্য মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করি।”
নিকাব নিষেধাজ্ঞার আগে বিতর্ক
গত কয়েক বছর ধরে কিরগিজস্তানে নিকাব একটি বিতর্কিত বিষয়। ২০১৪ সালে, দেশটি “আমরা কোথায় যাচ্ছি?” নামে একটি সরকারি প্রচারণা শুরু করে, যেখানে নেকাব এবং ইসলামিক পোশাককে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করা হয়েছিল।
২০২৩ সালে, দেশটির সংসদ সদস্য শারাপাতকান মাজিতোভা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ওশ পরিদর্শন করার পর নিকাব নিষিদ্ধ করল এক মুসলিম দেশ কিরগিজস্তান নিষিদ্ধ করার জন্য একটি নতুন প্রচারণা শুরু করেন। তিনি দাবি করেন যে “প্রতি চারজন মহিলার মধ্যে একজন নিকাব নিষিদ্ধ করল এক মুসলিম দেশ কিরগিজস্তান পরেন এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।” মাজিতোভা দাবি করেন যে, নিকাব নিষিদ্ধ করল এক মুসলিম দেশ কিরগিজস্তান ছাড়াও লম্বা দাড়িও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তিনি সরকারের কাছে নেকাব এবং বড় দাড়ি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।
নেকাব নিষেধাজ্ঞার ভবিষ্যতের প্রভাব
বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা কিরগিজস্তানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে একটি নতুন বিতর্ক তৈরি করবে। যদিও সরকার দাবি করে যে এটি নিরাপত্তার স্বার্থে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, সমালোচকরা বলছেন যে, এটি নারী স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।
বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো কিরগিজস্তানকেও ইসলামী পোশাকের উপর কঠোর নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য করবে।
তবে, দেশটির বিরোধী দলগুলি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, এই আইন নারীদের স্বাধীনতা হরণ করবে, কারণ তারা তাদের নিজস্ব পোশাক বেছে নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
অন্যান্য মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে ইসলামী পোশাকের পরিস্থিতি
কিরগিজস্তানের মতো অন্যান্য মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতেও ইসলামিক পোশাকের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে
- তাজিকিস্তানে হিজাব নিষিদ্ধ এবং মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী তাজিক পোশাক পরতে উৎসাহিত করার জন্য একটি সরকারী প্রচারণা চলছে।
- উজবেকিস্তানে, সরকারি অফিস, স্কুল এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ।
- কাজাখস্তানে, সরকারি ভবনগুলিতে হিজাব নিষিদ্ধ, যদিও জনসাধারণের মধ্যে এর উপর কোনও কঠোর নিয়ন্ত্রণ নেই। তুর্কমেনিস্তানে হিজাব আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ না হলেও, কর্মক্ষেত্রে এবং অফিসে নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে বাধ্য করা হয়।
- তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তানে পুলিশ রাস্তায় দাড়িওয়ালা পুরুষদের আটক করেছে এবং জোরপূর্বক তাদের কামিয়ে দিয়েছে।
- এই দেশগুলি বিভিন্ন সময়ে ইসলামী পোশাক এবং দাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
উল্লেখ্য যে কিরগিজস্তান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব সত্ত্বেও, দেশের সংবিধান ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে পৃথক করে এবং সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেএই নতুন আইন এবং এর প্রভাব নিয়ে দেশটির জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।