ডিমেনশিয়া: যে অবস্থা দেখলে হতে হবে সতর্ক
ডিমেনশিয়া (Dementia)
ডিমেনশিয়া অনেকটা স্মৃতিভ্রংশের মত মস্তিষ্কের একটি অবক্ষয়জনিত রোগ। এই রোগটি একজন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতিশক্তি এবং ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে। অনেক ধরণের ডিমেনশিয়া রয়েছে, যার মধ্যে আলঝাইমার রোগ সবচেয়ে সাধারণ। মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষে এক ধরণের প্রোটিন জমা হয়, যাকে বলা হয় প্লাক। ফলস্বরূপ, মানুষ চিন্তাভাবনা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব এবং ভুলে যাওয়ার লক্ষণ অনুভব করে। ডিমেনশিয়া সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের আগে ঘটে না। তবে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আমাদের প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে
ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষের ক্ষতির সাথে জড়িত, যা মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটতে পারে।
ডিমেনশিয়া স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে যা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। যেমনঃ
- মানিব্যাগ মোবাইল বা চাবি খুঁজে পাই না।
- অনেক দিন পর কোনও পুরনো সহকর্মীর সাথে দেখা করি এবং তাদের নাম মনে রাখতে পারি না।
- কেনাকাটা করার সময় জিনিসপত্র আনতে ভুলে যাই বা অন্য জায়গায় জিনিসপত্র রেখে যাই ।
- নিজের বাড়ির ঠিকানা ভুলে যাই।
- এক আইটেম খাওয়ার পর কী খেয়েছি তা মনে রাখতে পারিনা ।
সেদিন ,সসময় হয়তো আমাদের মন অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং সেই কারণেই আমরা ছোট ছোট জিনিস মনে রাখতে পারি না। এই সব ঘটনা সবসময় ঘটে। কিন্তু তখন ‘ডিমেনশিয়া ‘ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে এবং সমস্যা তখনই তৈরি হয় যখন এটি গুরুতর হয়।
তবে, প্রাথমিক লক্ষণগুলি সনাক্ত করার পরে চিকিৎসা শুরু করলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডিমেনশিয়ার ক’ টি প্রাথমিক লক্ষণ জেনে নেই –
স্মৃতিশক্তি হ্রাস
স্মৃতিশক্তি হ্রাস ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। এই সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে, আক্রান্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা স্মৃতি মনে রাখতে পারেন না। তারা এই ধরণের বিবরণ মনে রাখার জন্য পরিবার এবং বন্ধুদের উপর নির্ভর করেন। তবে, যদি কেউ মাঝে মাঝে কোনও ঘটনা ভুলে যান এবং পরে তা মনে রাখেন, তবে এটি স্মৃতিভ্রংশ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় না। এটি কেবল বয়স-সম্পর্কিত সমস্যা।
দৈনন্দিন কাজগুলি করা কঠিন হয়ে পড়ে
যখন আপনার ডিমেনশিয়ার লক্ষণ থাকে, তখন এমনকি এক কাপ চা তৈরি করা বা কম্পিউটার ব্যবহার করার মতো পরিচিত কাজগুলিও কঠিন হয়ে পড়ে। এগুলি এমন কাজ যা আপনি বহু বছর ধরে করে আসছেন কিন্তু এখন সম্পন্ন করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে। আপনি কর্মক্ষেত্রে বা বাড়িতে এই সমস্যাটি অনুভব করতে পারেন।
কথোপকথন চালিয়ে যেতে বা সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে অক্ষমতা
ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির যোগাযোগ করতে বা কথায় তাদের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতেও অসুবিধা হতে পারে। তারা কী বলছিল বা অন্য ব্যক্তি কী বলছিল তা ভুলে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, কথোপকথন চালিয়ে যাওয়া কঠিন হতে পারে এবং শেষ করতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। অনেকে এমনকি ভুল বানান বা ব্যাকরণগত ভুল করতে শুরু করে এবং তাদের হাতের লেখা বুঝতে অসুবিধা হয়।
মেজাজের পরিবর্তন
ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন সহজেই ডিমেনশিয়ার লক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কখনও কখনও আপনি প্রফুল্ল এবং প্রাণবন্ত বোধ করতে পারেন। অন্য সময়, সবকিছুই বিষণ্ণ বোধ করতে শুরু করতে পারে। ব্যক্তিত্বে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে, যা বেশ লক্ষণীয় হবে। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
দৃষ্টিশক্তি দুর্বলতা
দৃষ্টিশক্তি দুর্বলতা, কথা বলার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের অভাব এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সময় এবং তারিখ মনে রাখতে না পারাও এই রোগের লক্ষণ। রঙের পার্থক্য বুঝতে না পারা, দূরত্ব বুঝতে অসুবিধা, গাড়ি চালাতে অসুবিধা, এগুলি সবই ডিমেনশিয়ার লক্ষণ।
লেখাপড়া বুঝতে অসুবিধা
যেকোনো লেখা পড়তে, বুঝতে এবং লিখতে সমস্যা শুরু হয়। দেখা যেতে পারে যে রোগী অক্ষর, শব্দ, বাক্য গঠন করতে পারছেন না। সংখ্যা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। একের পর এক বাক্য লেখার চেষ্টা করলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তিনি যা লিখছেন তার অর্থ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে না। এমনকি ভাষায় কিছু প্রকাশ করার চেষ্টা করলেও সমস্যা হচ্ছে। তিনি সুসংগতভাবে কথা বলতে পারছেন না। এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান থাকুন।
কথা বলায় ভারসাম্য রক্ষা না করতে পারা
হঠাৎ হেসে কথা বলা, পরের মুহূর্তেই আবার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে! পরিণত বয়সে মানুষ মাঝে মাঝে এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়। যদি এটি ঘন ঘন ঘটে, তাহলে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, অনেকেই মানুষের সামনে আসতে চান না। অথবা যদি আসেও, তারা সঠিকভাবে আচরণ করেন না। তারা চরম রাগ, জেদ এবং মেজাজ দেখান।
কোলাহলপূর্ণ পরিস্থিতিতে শব্দ বুঝতে না পারা
অক্সফোর্ড গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে শুনতে সমস্যায় পড়েন তাদের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়। যদিও এটা ডিমনেশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ।
উপরের লেখা অবস্থাগুলো পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এবং সে আলোকে জীবনমান পরিচালনা করলে ডিমনেশিয়া থেকে অতিদ্রুত রক্ষা পাওয়া সম্ভব।